ইফতেখার আলম বিশাল: বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খানকে অবসরে পাঠানো সংক্রান্ত কৃষি মন্ত্রণালয়ের আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন উচ্চ আদালত। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান তাকে অবসরে পাঠানোর আদেশ চ্যালেঞ্জ জানিয়ে করা একটি রীট পিটিশনের প্রেক্ষিতে বুধবার (৯ এপ্রিল) শুনানী শেষে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি রাজিক-আল জলিল এবং বিচারপতি তামান্না রহমান খালিদীর যৌথ বেঞ্চ এই আদেশ দিয়েছেন। এছাড়া বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সেলিম রেজা এবং সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক সাময়িক বরখাস্তের আদেশও ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন একই আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো: ফরিদুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট মো: ফরিদুল ইসলাম বলেন, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন হলেও প্রতিষ্ঠানটি তার নিজস্ব আইন দ্বারা পরিচালিত। মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিএমডিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খানকে অবসরে পাঠানোর আদেশ যথাযথ হয়নি। মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত আদেশটি ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট বিভাগের এই যৌথ বেঞ্চ।
সূত্র জানায়, গত ২৫ মার্চ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান এক অফিস আদেশে তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেন। এতে বলা হয়, জাহাঙ্গীর আলম খানের চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে এবং যেহেতু সরকার জনস্বার্থে তাকে সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা প্রয়োজন মর্মে বিবেচনা করে, সেহেতু সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ধারা ৪৫ ও সরকারি চাকরি (সংশোধন) আইন, ২০১৩-এর উপধারা ২(গ)তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাকে সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা হলো। জনস্বার্থে জারি করা এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও ওই অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়।
বিএমডিএর সেচ শাখার প্রধান ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম খান। ২৩ মার্চ কোনো অফিস আদেশ ছাড়াই তিনি বিএমডিএর ইডির পদ ‘দখল’ করেন বলে অভিযোগ উঠে। ওই পদে ছিলেন সরকারের অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম। গত বছরের জুলাইয়ে তাকে বিএমডিএর ইডি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছিল। পরে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রেষণ-১ শাখার প্রজ্ঞাপনে তাকে রাজশাহীতে অবস্থিত বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়। তবে রেশম উন্নয়ন বোর্ডে যোগ না দিয়ে শফিকুল ইসলাম এক মাস ধরে বিএমডিএতেই ছিলেন।
এদিকে বিএমডিএর সদ্য বিদায়ী নির্বাহী পরিচালক (ইডি) শফিকুল ইসলাম একটি মামলা করেছেন তাকে তার পদ থেকে জোর করে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলে। মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি করা হয় বিএমডিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মজিবুর রহমানসহ ১৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। এছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরো ৫০-৬০ জনকে। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে হুসিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, অবিলম্বে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এই মামলায় কোনো আসামিকে গ্রেফতার ও হয়রানি করা যাবে না। অন্যথায় কর্মচারী ইউনিয়ন সহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। এতে করে বিএমডিএতে নতুন করে অস্থিরতা ও অচলাবস্থা সৃষ্টির আশংকা দেখা দিয়েছে।
এদিকে সদ্য বিদায়ী নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) শফিকুল ইসলামকে ক্ষমতা হারানো আ’লীগ সরকারের অনুগত একজন কর্মকর্তা আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তুলে ধরেছেন কর্মচারী ইউনিয়ন সহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একইসঙ্গে দায়ের করা মামলাটিকে মিথ্যা দাবি করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
বিএমডিএর একটি পক্ষ বলছে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিএমডিএর ইডি শফিকুল ইসলামকে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক হিসেবে বদলির আদেশ হয়। কিন্তু রিলিজ অর্ডার না পাওয়ায় তিনি দফতর ছাড়তে পারছিলেন না। এরই মধ্যে ২৩ মার্চ দুপুরে একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী বিএমডিএর ইডির দফতরে ঢুকে তারা শফিকুল ইসলামকে জোরপূর্বক দফতর ত্যাগ করতে বাধ্য করেন। ঘটনার পর অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম কৃষি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। ২৫ মার্চ মামলা করেন নগরীর রাজপাড়া থানায়।
শফিকুল ইসলামের অভিযোগ, তিনি মন্ত্রণালয়ের রিলিজ স্লিপ না পাওয়ায় বিএমডিএ থেকে অবমুক্ত হতে পারছিলেন না। রিলিজ স্লিপ না পাওয়া পর্যন্ত তাকে বিএমডিএতে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার জন্য মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম খানের নেতৃত্বে তার অনুসারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিএমডিএ ছেড়ে যাওয়ার জন্য চাপাচাপি করছিলেন। তিনি তাদের রিলিজ স্লিপ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তারা কোনো কথা শোনেননি।
তবে শফিকুল ইসলামের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সদ্য বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো বিএমডিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, এ ধরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মন্ত্রণালয় থেকে যথারীতি তাকে (শফিকুল ইসলাম) বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়। কিন্তু এক মাস পূর্ণ হলেও রিলিজ স্লিপ না পাওয়ার অজুহাতে বিএমডিএতে অবস্থান করছিলেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে আগে থেকে অসন্তোষ চলে আসছিল।
জাহাঙ্গীর আলম খান আরো বলেন, ২৩ মার্চ তিনি (শফিকুল ইসলাম) আমার কাছে নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব হস্তান্তর করলে আমি তা গ্রহণ করি। দায়িত্ব অর্পণ ও গ্রহণ সংক্রান্ত তার এবং আমার স্বাক্ষর সম্বলিত অফিস আদেশও রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জোরপূর্বক দায়িত্ব ছাড়তে শফিকুল ইসলামকে বাধ্য করার অভিযোগ সঠিক নয়।