রাজশাহী প্রতিনিধিঃ ক্ষমতাসীন দল আ‘লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাসে টর্চার সেল গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে।
অবৈধ ওই টর্চার সেলে বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সংবাদকর্মীসহ অন্তত ২৫ জন সাধারণ শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিন সন্ধ্যার পর রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাসের ই-ব্লক ও বি-ব্লকে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ না নিলে ছাত্রাবাসে থাকতে দেয়া হবে না এমন হুমকিও দিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতারা। এতে করে মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
নির্যাতনের শিকার শিক্ষানবীশ গণমাধ্যমকর্মীরা হলেন কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব ও শরীফুল ইসলাম। তারা ক্যাম্পাসের সাংবাদিক সংগঠন রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির (আরসিআরইউ) সদস্য।
হামলাকারীরা হলেন শাহরুখ, রাফি, ইমন, তরিকুল, রাজু, হাসান ও আহসান। তারা সবাই রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্তের অনুসারী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী কলেজ ছাত্রাবাসে থাকা শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক মিছিল-মিটিংসহ দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। যেতে না চাইলে শারীরিক নির্যাতনসহ নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। নির্যাতন করা হয় টর্চার সেলে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা অসুস্থ থাকলেও ছাড় পান না শিক্ষার্থীরা। এছাড়া রয়েছে সিট বাণিজ্যের অভিযোগ।
নির্যাতনের শিকার নাজমুস সাকিব গণমাধ্যমকে বলেন, ছাত্রলীগের কর্মীরা বিভিন্ন সময়ে তাদের দলীয় কর্মসূচিতে জোর করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে যায়। বুধবার বিকেলেও ছাত্রলীগের একটি কর্মসূচিতে যেতে হয়। সেখান থেকে ছাত্রলীগ নেতা রাফিকে (প্রোগ্রাম কনভেনর) মেডিক্যালে যাওয়ার কথা বললে ছাত্রাবাস ছেড়ে দিতে বলে। শেষ পর্যন্ত তাকে বুঝিয়ে আমি মেডিক্যাল যাই। পরে সন্ধ্যা ৬টায় হোস্টেলে ফিরলে ছাত্রলীগের শাহরুখ, রাজু, রাফি, হাসানসহ আট থেকে ১০ জন মিলে আমার রুমে ঢুকে মারধর করতে থাকে।
তিনি আরো বলেন, তারা আমার মোবাইলফোনসহ বেশ কিছু দামি জিনিসপত্র কেড়ে নেয়। একপর্যায়ে সব শিক্ষার্থীকে ব্লকে আটকে রেখে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে, অনেককে মারধরও করে। পরে সবাইকে ধাক্কা দিতে দিতে গণরুমে নিয়ে যায়। সেখানে শাসানো হয় যে, কারো কাছে কোনো অভিযোগ করলে অবস্থা মারাত্মক হবে। বলতে গেলে ছাত্রাবাসে আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীরা মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
আরেক ভুক্তভোগী শরিফুল ইসলাম জানান, আমি সকাল সাড়ে ৯টায় ব্যক্তিগত কাজে বের হয়ে যাই। সারাদিন ব্যস্ত ছিলাম। এরপর সন্ধ্যায় রুমে এসে নিউজ লিখছিলাম। এ সময় হঠাৎ করেই ছাত্রলীগ নেতা রাশিক দত্তের কর্মী শাহরুখ রুমে ঢুকে। কিছু না জিজ্ঞেস করেই অতর্কিত মারপিট করতে থাকে।
তিনি অভিযোগ করেন, সাংবাদিক পরিচয় দিলে আরো মারতে শুরু করে। তার সাথে আরো ছেলেরা এসে আমাকে মেরে রুম থেকে বের করে দেয়। বকাবকি ও ধাক্কাধাক্কি করে অন্য ব্লকে নিয়ে যায়। সেখানে আরো অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থীকে দেখি, যাদের আটকে রাখা হয়েছে। পরে সবাইকে জোর করে নিয়ে যায় দলীয় কর্মসূচিতে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার পরে ছাত্রলীগ সভাপতি রাশিক দত্ত আমাদেরকে শাসিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে নিয়মিত উপস্থিত থাকতে হবে। অন্যথায় ছাত্রাবাসে থাকতে দেয়া হবে না। এর আগেও বেশ কয়েকবার মা-বাবা তুলে গালিগালাজ ও বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি।
সনি বাংলা ডট/ ই আবি