অনলাইন ডেস্ক: বহু বিতর্কের পর অবশেষে ভারতের অযোধ্যায় রামমন্দিরে বিগ্রহের ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’ করলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
মন্দিরটি যেখানে তৈরি হয়েছে, সেটা ভারতের সব থেকে বিতর্কিত ধর্মীয় স্থানগুলির অন্যতম। ওখানেই একসময়ে ছিল ষোড়শ শতাব্দীতে তৈরি বাবরি মসজিদ।
রাম মন্দির ধ্বংস করে ওই মসজিদ গড়া হয়েছিল, এই দাবি তুলে হিন্দু জনতা ১৯৯২ সালে মসজিদটি ভেঙ্গে দিয়েছিল। তারপরে সারা দেশে শুরু হয়েছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, অভিযোগ তাতে মারা গিয়েছিলেন প্রায় দুই হাজার মানুষ।
সোমবার রামমন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতি ছিলেন দেশ-বিদেশের অতিথিরা- যাদের মধ্যে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে শিল্পপতি, খেলা ও চিত্রজগতের তারকারাও ছিলেন।
যদিও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি অংশ এবং বিরোধী দলগুলোর নেতাদের প্রায় সবাই এই অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন এই অভিযোগ তুলে যে মি. মোদী রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার জন্য একে ব্যবহার করছেন।
ভারতে কিছুদিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, মন্দিরের নামে ভোট সংগ্রহের চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীন বিজেপি।
২০১৯ সালে অযোধ্যা মামলায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল যে, অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের বিতর্কিত জায়গাটি একটি ট্রাস্টকে দেওয়া যেতে পারে এবং সেখানে একটি রামমন্দির তৈরি করা যেতে পারে।
একইভাবে, উত্তরপ্রদেশের সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে বলা হয় যে, তাদেরকে পাঁচ একর জমি দেওয়া হবে, যেখানে তারা একটি মসজিদ তৈরি করতে পারবে।
রামমন্দির উদ্বোধনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে আরও কয়েকদিন আগে থেকে। রোববার থেকেই বিখ্যাত সব অতিথিরা প্রাচীন এই নগরে আসতে শুরু করেন।
তবে সোমবার সকাল থেকেই ‘রাম নগরীতে’ সাজো সাজো রব। রামমন্দির সেজে উঠেছে বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা আড়াই হাজার কুইন্টাল ফুল দিয়ে। কড়া সুরক্ষা বলয়ে ঢাকা ছিল অযোধ্যা।
কড়া নজর রেখেছেন পুলিশ এবং কমান্ডোবাহিনীর জওয়ানেরা, গতিবিধির উপর নজর রাখতে মোতায়েন করা হয়েছে স্নাইপারও। উড়ছে অত্যাধুনিক নজরদারি ড্রোন। নিরাপত্তার মোটা চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে পুরো এলাকাকে।
শুধুমাত্র মন্দির নির্মাণের জন্য আনুমানিক ১৮০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এর প্রাঙ্গনটি ৭০ একর জুড়ে বিস্তৃত, মূল মন্দির রয়েছে ৭.২ একর জায়গা জুড়ে।
মনোরম তিন তলা মন্দির গড়া হয়েছে গোলাপি বেলেপাথর দিয়ে, নিচের দিকে রয়েছে কালো গ্রানাইট পাথর। প্রায় ৭০ হাজার স্কোয়ার ফুট জুড়ে ধবধবে সাদা মার্বেল পাথর পাতা হয়েছে। মার্বেল পাথরের বেদিতে বসানো হবে ৫১ ইঞ্চি উঁচু রামের মূর্তি।
রামের আরাধনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বেলা ১২ টা ২৯ মিনিট ৮ সেকেন্ড থেকে বেলা ১২ টা ৩০ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের মধ্যে গুনে গুনে ঠিক ৮৪ সেকেন্ড, এই সময়ের মধ্যেই বিগ্রহের ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ করেন নরেন্দ্র মোদী। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী একে বলে বলে ‘অভিজিৎ মুহূর্ত’। এর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে হিন্দু শাস্ত্রে।
হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী, ভগবান রাম এই মুহূর্তে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। সারা দিনে দু’বার ‘অভিজিৎ মুহূর্ত’ আসে। শ্রীকৃষ্ণেরও জন্ম হয়েছিল মধ্যরাতের ‘অভিজিৎ মুহূর্তে’। জ্যোতিষশাস্ত্র বলে, সারা দিনে ৩০টি মুহূর্ত রয়েছে। তার মধ্যে ‘অভিজিৎ মুহূর্ত’ অষ্টম।
রামমন্দির উদ্বোধনের পর রামলালার ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠার’ জন্য এই ৮৪ সেকেন্ড নির্ধারিত করা হয়েছিল। সেই নির্ঘণ্ট মেনে এদিন বেলা ১২টা ৫ মিনিট থেকে চূড়ান্ত অনুষ্ঠান শুরু হয়।
পুরো অনুষ্ঠানটি টেলিভিশনের সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ”বহু শতাব্দী ধরে অপেক্ষার পরে ভগবান রাম আবার আমাদের মাঝে এসেছেন। রামলালা আর অস্থায়ী গৃহে নয়, এবার দিব্য মন্দিরে থাকবেন।”
বেলা ১২ টা ২৯ মিনিট ৮ সেকেন্ড থেকে বেলা ১২ টা ৩০ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের মধ্যে ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ হয়েছে।
রামমন্দির উদ্বোধনের পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস আটাওয়ালে বলেছেন, “এটি একটি আনন্দের দিন। সারা বিশ্বের মানুষ প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন।”
এই অনুষ্ঠানকে রাজনৈতিক রঙে রাঙাতে নারাজ তিনি।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুপ্রিয়া প্যাটেল উপস্থিত ছিলেন এদিন অযোধ্যাতে। তিনি বলেছেন, “কোনও দেশ নিজের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে রক্ষা না করে উন্নতি করতে পারে না।”
“প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে আমাদের সরকার আমাদের সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে এবং আমাদের ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব করার জন্য ক্রমাগত অনুপ্রাণিত করছে”, মন্তব্য করেন তিনি।
অন্যদিকে, ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবেগৌড়া বলেছেন, “আজ মোদীর পূজো দেওয়ার ঈশ্বর প্রদত্ত সুযোগ।”
সনি বাংলা ডট কম/ইআবি