• রাজশাহী, বাংলাদেশ
  • ৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • নিবন্ধন এর জন্য আবেদনকৃত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  • news@sonybangla.news
  • ০১৭৭৫-৫৮৯৫৫৮

তারা সবাই সাপ ধরেন

প্রকাশ: শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ৯:৩৮

তারা সবাই সাপ ধরেন

তারা সবাই সাপ ধরেন

অনলাইন ডেস্ক: লোকালয় থেকে সাপ উদ্ধার করে প্রাকৃতিক পরিবেশে বিচরণের জন্য ও সাপের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের সেচ্ছাসেবী সংগঠন স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশ। ফোন আসলেই সাপ উদ্ধারে তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছুটে যান।

স্নেক রেসকিউ টিমের মাৃধ্যমে জানা যায়, মানুষ এবং বন্যপ্রাণীর মধ্যে একটি সহাবস্থান তৈরি ও সাপ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি লক্ষ্যে গড়ে তোলা হয়েছে স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশ। এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য হলো লোকালয় থেকে মানুষকে রক্ষার মাধ্যমে সাপকে উদ্ধার করে তার প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়া।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ২৫ জন সদস্য নিয়ে সংগঠনটি ২০২০ সাল যাত্রা শুরু করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশ পেইজের মাধ্যমে সারা দেশে বিনামূল্যে সাপ রেসকিউয়ের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ফেসবুক পেইজে তাদের হটলাইন নাম্বার দেওয়া আছে। ওই নাম্বারে ফোন আসলেই তারা ছুটে যান। তারা সিমটমমের মাধ্যমে বুঝতে পারেন এটা কি ধরনের সাপ। আর তারা যাওয়া পর্যন্ত সাপটি থাকবে কিনা।

এ টিমটি গত এক বছরে বিষধরসহ ২ হাজার ২শ সাপ লোকালয় থেকে উদ্ধার করে প্রাকৃতিক পরিবেশে অবমুক্ত করেছে।

স্নেক রেসকিউ টিমের প্রতিষ্ঠাতা সিদ্দিকুর রহমান রাব্বি বলেন, ছোটবেলা মামার বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে সাপ দেখে ধরতে না দিলে কান্না করি। পরে আমাকে সাপ ধরতে দেয়। সেখান থেকে আমার সাপের প্রতি ভয় কেটে যায়। স্কুলে যাওয়া আসার পথে সাপের খেলা দেখতাম আর তারা কি করে সাপকে কৌশলের মাধ্যমে আয়ত্ব করে। পরে বাসায় এসে ডিসকভারি চ্যানেলেও সব সময় সাপ দেখতাম। তখন থেকেই সাপ ধরার প্রতি নেশা জন্মায়। এগুলো দেখে কোনটি বিষমুক্ত আর কোনটি বিষাক্ত তা বুঝে নেই। প্রথমে বিষমুক্ত সাপ ধরতে শুরু করি। এক সময় বিষাক্ত সাপকে ধরে ফেলি। এভাবেই একা একা কাজ শুরু করি।

তিনি বলেন, ফেসবুকে অনেক সাড়া পাই। অনেকেই সাপ ধরা শিখতে আগ্রহ প্রকাশ করে। পরে চিন্তা করি একটি টিমের মাধ্যমে কাজ করলে ভালো হয়। তার পর ২০২০ সালে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে অনলাইন প্লট ফরমে স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশ নামে পেইজ খুলি। একজন দুইজন করে আমার টিমে সদস্য বাড়তে থাকে। আমি তাদের ট্রেইনিং দেই। এখন আমাদের টিমে মেয়ে সদস্যসহ বর্তমানে ২৫ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রেসকিউয়ার রয়েছে। দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে ফোন আসলেই আমরা সাপ উদ্ধার করতে ছুটে যাই।

স্নেক রেসকিউ টিমের বর্তমান সভাপতি রাজু আহম্মেদ বলেন, রাব্বী ভায়ের কাছ থেকে সাপ ধরতে শিখেছি। এত আমার অনেক ভাল লাগে। আমি বেসরকারি রার্নার গ্রুপে চাকরি করি। সুযোগ পেলেই সাপ ধরতে ছুটে যাই। যে সাপগুলো বিপদগ্রস্ত, মানুষের বাসস্থানে ঢুকে পড়ে তাদের উদ্ধার করে সেগুলোকে প্রকৃতিতে তাদের অবস্থানে ফিরিয়ে দেই। এছাড়াও অসুস্থ সাপ এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণীর চিকিৎসার মাধ্যমে সেগুলো সুস্থ করে অবমুক্ত করি।

তিনি বলেন, এই টিম কিং কোবরা, পদ্ম গোখরা, খৈয়া গোখরা, শঙ্খিনী, ব্ল্যাক ক্রেইট, গ্রিন পিট-ভাইপারের মতো বিষধর সাপ এবং নির্বিষ অজগর, কুকরি, বেত আঁচরা, দুধরাজ, ফণিমনসাসহ ২ হাজার ২শ বিষধর এবং নির্বিষ সাপ উদ্ধার করেছি। একই সঙ্গে বিষাক্ত প্রজাতির লাল-গলা ঢোঁড়া অসুস্থ সাপ উদ্ধার করে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করেছি।

এ টিমের নারী প্রচার সম্পাদক তাসমিয়া বলেন, আমার বাড়ি জামালপুরে। ফেসবুকের মাধ্যমে রাব্বী ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়। আমার ছোটবেলা থেকেই সাপ ধরার খুব ইচ্ছে ছিল। পরে রাব্বী ভায়ের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সাপ ধরা শিখি। গত মে মাসেই আমরা ৫টি অজগর সাপ ধরেছি। ২০২২ সালেই ১২টি অজগর সাপ উদ্ধার করে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দিয়েছি। বাংলাদেশের প্রথম লিউসিস্টিক জলঢোঁড়া সাপটিও আমাদের টিম উদ্ধার করেছে। সাপ ছাড়াও প্রায় ১ হাজারের উপরে অন্য বন্যপ্রাণী উদ্ধার এবং অবমুক্ত করেছে আমাদের টিম।

এ টিমের সাংগঠনিক সম্পাদক জোবাইদুর রহমান মেহেদী বলেন, বর্তমানে ১৮ জন সাংগঠনিক সদস্যা দ্বারা টিম পরিচালনা করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য সাপ সম্পর্কিত একটি অনলাইনভিত্তিক কোর্সও চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগ্রহী ব্যক্তিরা এই কোর্সে অংশগ্রহণ করছেন। তাদের মাঝে আমরা সাপ সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করে সাপ বিষয়ে করণীয় কাজগুলো সম্পর্কে ধারণা প্রদান করি।

তিনি বলেন, বর্তমানে টিমে মোট সদস্য রয়েছেন ৫০ জন এবং তথ্য দিয়ে আরও ২০০ জন আমাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। এছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে নতুন সদস্য যুক্ত হচ্ছেন। সারা দেশেই সদস্য তৈরি করে তাদের প্রশিক্ষণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় ৪০ জেলায় প্রশিক্ষিত উদ্ধারকর্মী তৈরি করার পরিকল্পনা কয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের টিমে বেশির ভাগ সদস্য শিক্ষার্থী। কয়েকজন চাকরিজীবী রয়েছেন। আমাদের সবার কিছু কিছু টাকার মাধ্যমে ফান্ড তৈরি করা হয়েছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। আমাদের সাপ উদ্ধারে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। ভাড়ার টাকা জোগাড় করতে কষ্ট হয়ে যাই। যদি সরকার আমাদের টিমকে পৃষ্ঠপোষকতা করতো তাহলে আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারতাম। এতে মানুষকে রক্ষার পাশাপাশি সাপ সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা থেকে সচেতন করে প্রকৃতিকেও রক্ষা করা যেত।

সনি বাংলা ডট কম/ইআবি

সর্বশেষ সংবাদ

পুঠিয়ায় ৫৭ কেজি গাঁজাসহ যুবক গ্রেফতার, একজন পলাতক
শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২ ৯:৩৮
 

রাজনীতি-এর আরও সংবাদ

 



প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: ইফতেখার আলম বিশাল

যোগাযোগ: শিরোইল গৌধুলী মার্কেট ঢাকা বাস টার্মিনাল বোয়ালিয়া রাজশাহী। ই-মেইল: smbishal18@gmail.com, মোবাইল:০১৭৭৫-৫৮৯৫৫৮