নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী মহানগরীতে এক সময় ফুটপাত দখল করে ব্যবসা চালানো হতো। এখন খোদ রাস্তা দখল করে চলছে রমরমা ব্যবসা। শুধু ব্যবসাই নয়, রীতিমত রাস্তার পজিশন ভাড়া দেয়া হচ্ছে। এক পক্ষ দখল করে ভাড়া দিচ্ছেন অন্যপক্ষকে। এমন অবস্থা চোখ মেললেই দেখা যাচ্ছে নগরীর প্রধান রাস্তা থেকে ফুটপাতে। তবে এভাবে রাস্তা ও ফুটপাতে দোকানপাট বসানোর কারণে নগরীতে যানজট তীব্রতর হচ্ছে। কিন্তু এসব দেখার মত কেউ নেই। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব থাকলেও তাদের নজর নেই। ফুটপাতের পর একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা এখন রাস্তা গিলে খাচ্ছে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, চরম ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ।
এক সময় নগরীর নিউমার্কেটের সামনে ফুটপাত দখল করে বিভিন্ন ধরনের দোকানপাট বসিয়ে ব্যবসা করা হতো। আ.লীগ সরকারের সময় কিছু নেতারা নিউমার্কেটের ফুটপাত দখল করে পজিশন ভাড়া দিতো। মুলত ২০২৩ সালে নিউমার্কেটের ফুটপাতে গড়ে তোলা একটি দোকানকে কেন্দ্র করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতার হাতে এক যুবক খুন হন। এই খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাসিক ফুটপাতের সব দোকান উচ্ছেদ করে। পরে সেখানে আধুনিক মানের ফুটপাত নির্মাণ করা হয়। বর্তমান নিউ মার্কেটের পূর্ব পাশের ফুটপাত দখল মুক্ত রয়েছে। তবে এখন ফুটপাতের নিচে রাস্তা দখল করে চলছে ব্যবসা। মূলত রেলগেট থেকে সাহেববাজার পর্যন্ত দুপাশে দশ ফিট করে রাস্তা রয়েছে। নগরীর অন্যান্যা রাস্তার চেয়ে এটি অনেকটাই ব্যস্ততম রাস্তা। কিন্তু নিউমার্কেটের উত্তর কর্ণার থেকে সাহেববাজার পর্যন্ত রাস্তার দুধারে দোকানপাট বসানো হয়েছে। এতে এই রাস্তায় আয়তন এসে দাঁড়িয়েছে ৫ ফিটে। এতে একটি অটোরিক্সার সাথে একটি মাইক্রো এক সাথে গেলে যানজট সৃষ্টি হয়। কিছু কিছু জায়গায় রাস্তা ও ফুটপাত দুটোই দখল করে দোকান বসিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে।
দেখা গেছে, নিউমার্কেটের পূর্বপাশে ফুটপাতের নিচে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে অস্থায়ী ঢোপ দোকান। এসব ঢোপ দোকান অস্থায়ী হলেও রাস্তার পাশে স্থায়ীভাবেই থাকে। এসব ঢোপ দোকান আবার ভাড়াও দেয়া হয়। গতকাল শনিবার নিউমার্কেটের সামনে দাঁড়াতে চোখে পড়ে ঢোপ দোকানে লাগানো ছোট কাগজে ভাড়া দেয়ার বিজ্ঞাপন। বেশ কয়েকটি দোকান ভাড়া দেয়া হবে বলে বিজ্ঞাপন আকারে ঝুলানো হয়েছে। সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে মোবাইল নম্বর। লোকজন না থাকার কারণে বিষয়টি জানার সুযোগ ছিল না। পরে লিফলেটে ব্যবহার করা নম্বরে ফোন দেয়া হয়। জানতে চাওয়া হয় এখানে কয়টি ঢোপ দোকান ভাড়া দেয়া হবে। ফোনের ওপাশ থেকে জানানো হয়, শুধু ঢোপ দোকান নয়, যেখানে ঢোপ দোকান রাখা হয়েছে সেখানে পজিশনসহ ভাড়া দেয়া হবে। কতটি দোকান ভাড়া দেয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার দুটি দোকান রয়েছে। বিগত দিনে ভাড়া দেয়া ছিল। তারা ভাড়া ছেড়ে দিয়েছেন। এখন নতুন করে ভাড়া দেয়া হবে। জানতে চাওয়া হয় ওটা তো রাস্তা, তাহলে কি করে আপনি পজিশনসহ ভাড়া দিবেন। এমন প্রশ্ন করায় তিনি ফোন কেটে দেন। পরে আবারো যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। শুধু এই ব্যক্তিই নয়, নিউমার্কেটের পূর্বপাশে প্রায় দেখা যায়, রাস্তায় দোকান ভাড়া দেয়া হবে।
এদিকে নগরীর রেলগেট থেকে শুরু করে সিএনবির মোড় পর্যন্ত ফুটপাত ও রাস্তা দুটোই দখল করে বসানো হয়েছে দোকানপাট। লক্ষীপুর মোড় থেকে ঘোষপাড়া মোড়, লক্ষীপুর মোড় থেকে ঝাউতলা মোড় এসব ব্যস্ততম রাস্তার ফুটপাত দখল করে চলছে বাণিজ্য। যারা ফুটপাতে ব্যবসা করেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগ ব্যক্তিই সেই জায়গা পজিশন ভাড়া নিয়েছেন। কিছু কিছু এলাকায় প্রতিদিন দোকান থেকে চাঁদা তোলা হচ্ছে। মূলত রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে দোনপাট বসানোর কারণে নগরীতে যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তারপরও রাসিক বিষয়টি দেখছে না। তবে রাসিক থেকে বলা হচ্ছে, ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা বা উচ্ছেদ অভিযান চালানোর ম্যাজিষ্ট্রেট নেই রাসিকে। যার কারণে তারা এসব বিষয় পদক্ষেপ নিতে পারছেন না। আর সাধারণ মানুষ চাচ্ছেন দ্রæত এসব রাস্তার দোকানপাট অপসরণ হোক। কিন্তু কে করবে উচ্ছেদফুটপাত ও রাস্তার দোকানপাট?