অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশের গত সাতই জানুয়ারির নির্বাচনের দিকে বেশ ভালোভাবেই নজর রেখেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
নির্বাচনের পর দিন, অথ্যাৎ আটই জানুয়ারি, প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায় দেশটির স্টেট ডিপার্টেমন্ট বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়, “যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ্য করেছে সাতই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন নিয়ে জয়ী হয়েছে। তবে হাজারো বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীর গ্রেফতার এবং নির্বাচনের দিনে বিভিন্ন জায়গায় নানা ধরণের অনিয়মের খবরে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন।”
সেই সাথে, বাংলাদেশের এই নির্বাচন “অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না” বলে অন্য পর্যবেক্ষকদের প্রতিক্রিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্র একমত বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।
এছাড়া নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ না করায় হতাশা প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র।
একই দিনে, যুক্তরাজ্যও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানায়।
যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, “গণতান্ত্রিক নির্বাচন নির্ভর করে বিশ্বাসযোগ্য, মুক্ত ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার ওপর।”
“মানবাধিকার, আইনের শাসন ও যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অপরিহার্য উপাদান। (বাংলাদেশে) নির্বাচনের সময় এসব মানদণ্ড ধারাবাহিকভাবে মেনে চলা হয়নি।”
নির্বাচনের পরদিন, অথ্যাৎ আটই জানুয়ারি, প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায় দেশটির স্টেট ডিপার্টেমন্ট।
এছাড়া নির্বাচনে সব দল অংশ না নেওয়ায় বাংলাদেশের মানুষের হাতে ভোট দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিকল্প ছিল না বলেও বিবৃতিতে বলা হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার টার্কও আটই জানুয়ারি এক বিবৃতি প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে বাংলাদেশে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা, বিরোধী মতের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এবং আটকাবস্থায় মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ জানান মি. টার্ক।
এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের পাশাপাশি প্রকৃত ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রে’র জন্য সরকারকে ‘গতিপথ পরিবর্তন করার’ও আহ্বান জানান তিনি।
এর পর দিন, অর্থাৎ ৯ই জানুয়ারি, বিবৃতি দিয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
বড় সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে না অংশ না নেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে তারা।
একই সাথে, সাতই জানুয়ারির নির্বাচনে হওয়া অনিয়মগুলোর পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আহবান জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধানের এমন বিবৃতির পর টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকার ‘বৈধতার সংকটে’ পড়তে পারে বলে অনেকে ধারণা করছিলেন।
এমনকি সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও বলতে শোনা গেছে যে ‘নির্বাচন বাতিলের ষড়যন্ত্র চলছে’।
বাংলাদেশে সাতই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মানদণ্ড’ মেনে অনুষ্ঠিত হয়নি বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য।
বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মানদণ্ড’ মেনে অনুষ্ঠিত হয়নি বলে মনে করে যুক্তরাজ্য
“চক্রান্ত এখনও শেষ হয়নি, ষড়যন্ত্র এখনও চলছে। একজন নারী হয়ে আমি পাঁচ পাঁচবার ক্ষমতায় এসেছি, এটা অনেক দেশের পছন্দ না”, গত ১৩ই জানুয়ারি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আওয়ামী লীগের মতবিনিময় সভায় বলেন তিনি।
“আমেরিকার লজ্জা নেই, তারা কখন কাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে তার ঠিক নেই” বলেও সেখানে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
কিন্তু এর কয়েক দিনের মধ্যে হঠাৎই যেন পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকে।
গত ১৭ই জানুয়ারি নবনিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সাথে দেখা করতে তার কার্যালয়ে যান বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
এরপর মি হাস সাংবাদিকদের জানান যে, দু’দেশের পারস্পরিক স্বার্থকে এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র আগামীতে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করার প্রতীক্ষায় আছে।
এর কয়েক দিনের মধ্যেই জানা যায় যে, শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড।
এছাড়া নতুন সরকার গঠনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের অভিনন্দন পেয়েছেন বলে আগেই জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
কিন্তু রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে এগুলো ঠিক কী বার্তা দিচ্ছে?
সনি বাংলা ডট কম/ইআবি