স্টাফ রিপোর্টার: বাল্যবিবাহ ও জালিয়াতির অভিযোগ রাজশাহী কোর্ট চত্বর, যেখানে আইন ও ন্যায়বিচারের প্রতীকস্বরূপ একটি শান্ত পরিবেশ বিরাজ করার কথা, সেখানে বর্তমানে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে কাজী মোঃ শফিকুল ইসলাম।
রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় বেআইনি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কোর্ট চত্বরে দাপটের সাথে চলাফেরা করছেন এই বিতর্কিত নিকাহ রেজিস্ট্রার। তার বিরুদ্ধে রয়েছে বাল্যবিবাহ নিবন্ধন, ভুয়া কাবিননামা তৈরি, অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে অবৈধ বিয়ে রেজিস্ট্রি, ও আদালতের পরিবেশ নষ্ট করার মতো গুরুতর অভিযোগ।
সূত্র জানায়, কাজী শফিকুল সাবেক মেয়র এস. এম. খায়রুজ্জামান লিটন এবং সাবেক এমপি ফজলে হোসেন বাচ্চার ঘনিষ্ঠ অনুসারী। এই দুই নেতার সুপারিশে বিগত সময়ে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী হিসেবে দায়িত্ব পান শফিকুল। পরবর্তীতে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী মোঃ জহুরুল ইসলামের মৃত্যুর পর সেই জায়গাতেও তিনি দায়িত্ব পালন করতে থাকেন, যদিও তা আদৌ বৈধ কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। সম্প্রতি রাজশাহী কোর্ট চত্বরে প্রকাশ্যে উচ্চস্বরে গালিগালাজ ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে দেন কাজী শফিকুল।
তার এই উচ্ছৃঙ্খল আচরণে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। একাধিক আইনজীবী জানান, “একজন নিকাহ রেজিস্ট্রারের এমন অপেশাদার, হুমকিমূলক এবং বেআইনি আচরণে বিচার ব্যবস্থার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তাকে আমরা আদালত এলাকায় আর দেখতে চাই না।” এলাকাবাসী জানান, মাত্র কয়েক হাজার টাকার বিনিময়ে কাজী শফিকুল অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়েদের বিবাহ রেজিস্ট্রি করে দেন। এটি শুধু আইন লঙ্ঘন নয়, বরং সমাজে ভয়াবহ সামাজিক সংকট তৈরি করছে। এছাড়াও, বিভিন্ন জাল দলিলপত্র তৈরি ও বিক্রি করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব কাজে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্রের সহযোগিতাও পাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কোর্ট চত্বরে নিয়মিত যাতায়াতকারী বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীরা আতঙ্কে থাকেন কাজী শফিকুল ও তার অনুসারীদের আগ্রাসী উপস্থিতির কারণে।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “এই লোক প্রশাসনের চোখে ধুলা দিয়ে দিনের পর দিন যা খুশি তা করে যাচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলেই হুমকি দেয় ক্ষমতাসীন দলের নাম করে।” এতসব অভিযোগের পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। সচেতন মহল বলছেন, “যদি এই কাজীর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে সমাজে অনিয়মকে উৎসাহিত করার বার্তা যাবে।” রাজশাহীর আইনজীবী সমিতি, মানবাধিকার সংস্থা এবং স্থানীয় নাগরিক সমাজ একসুরে দাবি তুলেছেন, কাজী শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে তার দায়িত্ব বাতিল করে তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।