নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, রাজনৈতিক সহ নানা কারণে সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন রয়েছে। এই বিভাজন থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। যতক্ষণ আমরা এক না হচ্ছি, ঐক্যবদ্ধ না হচ্ছি, ততক্ষণ পর্যন্ত দাবি আদায় হবে না। তাই দাবি আদায়ে সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
মহান মে দিবস (আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস) উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১ মে) দুপুরে রাজশাহী নগরীর একটি রেষ্টুরেন্টে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরইউজে) উদ্যোগে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মুহা: আব্দুল আউয়াল। অতিথি ছিলেন বিএফইউজের সহকারী মহাসচিব ও আরইউজের সাধারণ সম্পাদক ড. সাদিকুল ইসলাম স্বপন। এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আরইউজের ভারপ্রাপ্ত যুগ্ম সম্পাদক ওমর ফারুক, কোষাধ্যক্ষ তৌফিক ইমাম পান্না, নির্বাহী সদস্য সোহেল মাহবুব, রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মহিব্বুল আরেফিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মারুফ হোসেন মিশন, মানবজমিনের রাজশাহী প্রতিনিধি ডালিম হোসেন শান্ত, রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিম, আরইউজের সদস্য জিয়াউল কবির স্বপন প্রমুখ। সভায় রাজশাহী মহানগর প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট রজব আলী, দৈনিক নয়া দিগন্ত ডিজিটালের (মাল্টিমিডিয়া) প্রধান যুবরাজ ফয়সাল, রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সাঈদ রনি, আব্দুল হাকিমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
এতে সভাপতির বক্তব্যে সাংবাদিক নেতা আব্দুল আউয়াল বলেন, স্বৈরশাসনের আমলে প্রতিক‚ল পরিবেশ থেকে বর্তমানে আমরা একটা সম্ভাবনার জায়গায় এসেছি। যেভাবে কাজে লাগালে ভালো ভবিষ্যৎ হবে, সেই চেষ্টা করতে হবে। সাংবাদিকতাকে শক্তিশালী ও ভালো অবস্থানে কীভাবে নিয়ে যেতে পারি, সেই প্রচেষ্টা চালানো আমাদের মূল উদ্দেশ্য। সাংবাদিকতা সুশিক্ষিত দায়িত্বশীলদের পেশা, বিশ্বব্যাপী মর্যাদাপূর্ণ পেশা।
এসময় তিনি বলেন, রাজনৈতিক সহ নানা কারণে সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন রয়েছে। এই বিভাজন থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। যতক্ষণ আমরা এক না হচ্ছি, ঐক্যবদ্ধ না হচ্ছি, ততক্ষণ পর্যন্ত দাবি আদায় হবে না। তাই দাবি আদায়ে সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি আরো বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। কিন্তু যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাংবাদিকদের সত্য প্রকাশে সব সময় অবিচল ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকতে হবে। কোনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করা যাবে না।
বিএফইউজের সহকারী মহাসচিব ও আরইউজে সাধারণ সম্পাদক ড. সাদিকুল ইসলাম স্বপন বলেন, হাতেগোনা কিছু পত্রিকা-টেলিভিশন বেতন দেয়। বেশিরভাগই বেতন দেয় না। যদিও কিছুটা সত্যতা আছে, কিছুটা রিউমার আছে। সাংবাদিক নিয়োগে ক্রাইটেরিয়া মানা হয় না। যোগ্যদের নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি এবং সাংবাদিকদের বেতন ন্যূনতম ৩০ হাজার টাকা করতে হবে, সেই দাবি জানাই।
তিনি বলেন, ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন হয়। কিন্তু ওয়েজবোর্ডের আওতায় ঢাকার বাইরের সাংবাদিকরা আসেন না। ঢাকায় যারা সাংবাদিকতা করেন, নির্দিষ্ট বিটে তারা কাজ করেন। কিন্তু মফস্বলের সাংবাদিকদের সব বিটে কাজ করতে হয়। ঢাকার বাইরের সাংবাদিকরা অলরাউন্ডার হওয়ার পরও তাদের ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী বেতন দেওয়া হয় না।
সভায় বক্তারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট সর্বশেষ আমরা স্বাধীন হয়েছি। এই স্বাধীনতার ৯ মাস হয়ে গেল, কিন্তু আমরা কী অধিকার পাচ্ছি? কীভাবে সাংবাদিকদের অধিকার আদায় হবে? এ আর্তনাদ কার কাছে পেশ করা হবে? আমাদেরকে অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
তারা বলেন, আমাদের শ্রম জিম্মি হয়ে আছে। আমরা আমাদের অধিকার আদায়ে এগিয়ে যাবো, মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করে যাব। বৈষম্য নিরসন হোক, সেই দাবি জানাই।
বক্তারা আরো বলেন, আমরা ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী হওয়ার কারণে বিগত সময়ে বঞ্চিত ছিলাম। আমাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকলেও কাজ করতে দেওয়া হয়নি। এখন সাংবাদিক নেতারা আমাদের বিষয়গুলো নিয়ে যথাযথ ভ‚মিকা পালন করবেন বলে আশাবাদী আমরা।
সাংবাদিক নেতারা বলেন, ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগোতে কয়েকজন শ্রমিক জীবন দিয়েছিলেন। দিনটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে, পালন হচ্ছে। আমাদের দেশে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে অনেক শ্রমিক ও সাংবাদিক শহীদ হয়েছেন। দেশ থেকে ফ্যাসিস্ট, স্বৈরতন্ত্র ও জালিম সরকারকে বিদায় করতে এতগুলো প্রাণ গেছে। আমাদের প্রাণের মূল্য অনেক বেশি। সে জন্য ৩৬ জুলাইকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে হবে। যে রকম মাতৃভাষা দিবস ও শ্রমিক দিবসের স্বীকৃতি আছে, সে রকম ৩৬ জুলাইকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে হবে। সেই লক্ষ্যে এখন থেকে কাজ করে যাওয়া দরকার। যে সব জায়গায় প্রস্তাবনা দেওয়ার সুযোগ আছে, প্রস্তাবনা পাঠাতে হবে।