ইফতেখার আলম বিশাল: রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইটাঘাটী গ্রামে একটি ভুয়া মাদ্রাসা বন্ধের দাবিতে স্থানীয় গ্রামবাসী মানববন্ধন করেছেন। গত ৩০ এপ্রিল (বুধবার) বিকেলে গ্রামের প্রধান সড়কের পাশে আয়োজিত এ মানববন্ধনে কয়েকশ গ্রামবাসী অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, মসজিদের ইমাম, এবং রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, “জান্নাতুল ফেরদাউস মহিলা হাফেজিয়া মাদ্রাসা (লিল্লাহ বোর্ডিং ও এতিমখানা)” নামে কাগজে-কলমে একটি প্রতিষ্ঠান থাকলেও বাস্তবে সেখানে নেই কোনো পাঠদানের ব্যবস্থা বা শিক্ষার্থী। মাদ্রাসাটির পরিচালক রাজু আহমেদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অনুদানের নামে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।
হেফাজতে ইসলামের রাজশাহী জেলার প্রচার সম্পাদক নাইমুল হাসান রাজিব বলেন, ইমামের লেবাজ পরে ধর্মকে ঢাল করে যারা সাধারণ মানুষের অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণা করে, তারা চরম পাপী। রাজু আহমেদ এমনই একজন প্রতারক। তার নামে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। এতিম শিশুদের নাম ব্যবহার করে যেভাবে অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে, তা একদমই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
জামায়াতে ইসলামী বড়গাছি ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীবিহীন এই ভূয়া মাদ্রাসা দিয়ে রাজু বছরের পর বছর অনুদান তুলে আত্মসাৎ করেছে। এর পূর্ণ হিসাব তাকে দিতে হবে।”
মথুরা বাইতুল মামুন জামে মসজিদের ইমাম সাখাওয়াত হোসেন এবং মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হাফেজ মাওলানা কামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, যেখানে প্রকৃত মাদ্রাসা শিক্ষক ও ইমামদের সংসার চালানো কষ্টকর, সেখানে রাজু মানুষের দানের টাকা দিয়ে দামি দুটি মোটরসাইকেল কিনেছে—এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।”
গ্রামবাসী হায়দার আলী, শাহিনুর, বিশাল ও বেলাল জানান, রাজু আহমেদ মাদ্রাসা কমিটি গঠনের সময় একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষকের স্বাক্ষর জাল করে তাকে সভাপতি বানিয়েছিল। ইটাঘাটী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক খোইবর আলী বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি জানতাম না যে আমার স্বাক্ষর জাল করে আমাকে মাদ্রাসার সভাপতি বানানো হয়েছে। পরে জানার পর আমি তাকে আমার নাম বাদ দিতে বলেছি।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিন সকালবেলা তিন থেকে চারটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দিয়ে গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় অনুদান সংগ্রহ করা হয়। অথচ মাদ্রাসাটিতে বাস্তবে কোনো শিক্ষার্থী বা এতিম শিশু নেই।
উল্লেখ্য, মাদ্রাসাটির পরিচালক রাজু আহমেদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলায় (জিআর মামলা নং ২১/২০১৯, পবা থানা) কয়েক মাস কারাগারে ছিলেন। তিনি ইটাঘাটী গ্রামের মো. তফেজউদ্দিনের ছেলে।
গ্রামবাসী এবং সচেতন মহল এই ভুয়া মাদ্রাসা দ্রুত বন্ধ করে প্রতারণার সঙ্গে জড়িত রাজু আহমেদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।