• রাজশাহী, বাংলাদেশ
  • ৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • নিবন্ধন এর জন্য আবেদনকৃত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  • news@sonybangla.news
  • ০১৭৭৫-৫৮৯৫৫৮

মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এমটির বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

প্রকাশ: শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫ ৬:২৭

মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এমটির বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (এমটি, ইপিআই) আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে একেরপর এক অভিযোগ উঠার পর বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন। এক সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের যোগসাজসে দাপটের সাথে থাকলেও পট পরিবর্তনের পর তিনি নিজেও ভোল্ট পাল্টিয়ে দাপটের সাথে রয়েছেন। বর্তমান মোহনপুর উপজেলা জামায়াতের কিছু নেতাদের সাথে যোগসাজস করে দাপটেই চলছেন এই মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। কোভিট-১৯ এর কর্মচারিদের টাকা আত্মসাত, ভুয়া বিল ভাউচার করে টাকা উত্তোলন, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলন, বদলী বাণিজ্য, কেউ অন্য জায়গায় থেকে বদলী হয়ে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে চাইলে তার বদলী ঠেকানো, তার পছন্দের কর্মচারিদের বিশেষ সুযোগ সুবিধা দেয়াসহ নানান অভিযোগ রয়েছে এই মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট আলমগীর হোসেন বিরুদ্ধে। যদি তিনি তার দোষ অন্যদের ঘাড়ে চাপিয়ে বরাবরই পার পাওয়ার চেষ্টা করছেন।

জানা গেছে, সারাদেশের উপজেলা পর্যায়ে ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী থেকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু হয়। সারাদেশের ন্যায় রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার প্রতি ইউনিয়নে ৭২ দিন টিকা কার্যক্রমের বিল আসে। যদিও ইউনিয়ন পর্যায়ে ৫ থেকে ৭ দিন কোভিড-১৯ টিকা কার্যক্রম চলমান ছিল। কিন্তু মোহনপুর উপজেলায় ৭২ দিনের পুরো বিল উত্তোলন করা হয়। আর এই বিল উত্তোলন করেন মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (এমটি ইপিআই) আলমগীর হোসেন। তিনি বিল উত্তোলন করলেও যারা এর সাথে জড়িত ছিল তাদের পুরো টাকা দেয় নি। সামান্য টাকা ধরিয়ে দিয়ে বাকি টাকা তিনি আত্মসাত করেছেন। আবার কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারির সাক্ষর জাল করেও তিনি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন।
জানা গেছে, মোহনপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার মাকিম। বর্তমান তিনি অবসরে রয়েছেন। এই অফিসারের সাক্ষর জাল করে আলমগীর হোসেন টাকা তুলে আত্মসাত করেছেন। এমন কি ডা. শরিফা বেগমের স্বাক্ষর জাল করে টাকা তুলেছেন আলমগীর হোসেন। কোভিট-১৯ টিকা সুপারভিশন ভ্রমন বাবদ ১ লাখ ৮ হাজার টাকা জাল স্বাক্ষর করে উত্তোলন করেন তিনি। এমনকি টিকাদানকারী ও সেচ্ছাসেবীদের আপ্যায়ন বিল বাবদ ৭ লাখ ৩ হাজার ৭শত ২৮ টাকা উত্তোলন করা হয়। তৎকালিন খাদ্য সরবরাহকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মচারী নুর মোহাম্মদকে ম্যানেজ করে কুক এর নামে ২৮টি ভূয়া ভাউচার তৈরী করে এ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেন আলমগীর হোসেন। তবে এই টাকা আত্মসাতের সাথে সরাসরি মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আরিফুল কবীর জড়িত। তারা দুজন মিলে জাল সাক্ষর, ভুয়া বিল ভাউচার করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন।
কাগজপত্র ঘেঁটে জানা গেছে, মোহনপুরে ওয়ার্ড পর্যায়ে ইপিআই পরিবহন ভাতা বিতরণের পর মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এমটি (ইপিআই) আলমগীর হোসেন বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ উঠে। এসব অনিয়মের ব্যাপারে ওই সময়ে স্বাস্থ্য সহকারী জুয়েল হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, হাসিনা, রুমি খাতুন, শেফালী খাতুন, মার্জিনা, আব্দুর কাদের, রোজিনাসহ বেশ কিছু কর্মচারি স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক বরাবব লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে চাকরি থেকে এসব কর্মচারিদের বরখাস্তসহ বিভিন্ন ভযর্ভীতি দেখিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। এমন কি ২০২২ সালের ১২ মার্চ অভিযোগকারিদের বিরুদ্ধে অফিস প্রধানকে ম্যানেজ করে কৈফিয়ত তলব করা হয়। ১৫ মার্চ অভিযোগকারী স্বাস্থ্য সহকারীগণ অভিযোগ প্রত্যাহার করে মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করে। যদিও এই অভিযোগ প্রত্যাহারের বিষয়টি নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। তারা মোহনপুরে একটি মিস্টির দোকানে বসে আলমগীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ কাগজে সাক্ষর করেন। পরে সিটি ক্যামেরার ফুটেজে প্রকাশ হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। শুধু তাই নয়, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আলমগীর হোসেন ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ডিস্ট্রিবিবউশন পয়েন্ট থেকে সাব ব্লক টিকা কেন্দ্রের পরিবহন বিল কম দিতেন। বর্তমানও তা অব্যাহত রেখেছেন। এছাড়াও কর্মচারিদের ভয়ভীতি দেখানো, অশালিন ভাষায় কথা, কারণে অকারণে কর্মচারিদের উপর ক্ষিপ্ত হওয়ার অভ্যাস এখানো চালু রয়েছে। যার কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলার সাহস পায় না।
মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আলমগীর হোসেনের এসব অনিয়মের ব্যাপারে বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারির সাথে কথা বলা হয়। এরমধ্যে খাদ্য সরবরাহ কারী নুর মোহাম্মদ বলছেন আলমগীর হোসেন ভুয়া বিল ভাউচার তৈরী করে যে পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ করা হতো তার চেয়ে বেশি টাকা উত্তোলন করতো। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাকিম সাংবাদিকদের জানান, মেডিকেল অফিসার ডাক্তার শরিফা বেগম ও আমি সুপার ভিশনের কোন টাকা পাইনি। আর যে স্বাক্ষর দিয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে সে স্বাক্ষরও আমাদের নয়। আমাদের সাক্ষর আলমগীর হোসেন জাল করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে মোহনপুর উপজেলা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এমটি (ইপিআই) আলমগীর হোসেনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বক্তব্য দিতে অপারকতা প্রকাশ করে বলেন, অফিসে আসেন কথা বলবো।
এব্যাপারে সাবেক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার কর্মকর্তা ডা. আরিফুল কবীর জানান, আমি সবাইকে সঠিকভাবেই টাকা দিয়েছি। এখন আলমগীর হোসেন কাকে, কিভাবে কত টাকা দিয়েছেন সেটি আমার জানা নেই। দোষ চাপানোর বিষয়ে তিনি বলেন, আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে আগে থেকেই অভিযোগ ছিল। জানি না সে কিভাবে আছে। আমার দিক থেকে কোনো অনিয়ম হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার কর্মকর্তা ডা. আক্তার হোসেন জানান, আমি মাসতিনেক আগে এখানে এসেছি। আগে আলমগীর হোসেন কি করেছে, না করেছে, সেটি জানি না। তবে এখন কোনো ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতি করার সযোগ নেই।
আলমগীর হোসেন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রীর সুপারিশে মোহনুপর উপজেলায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এমটি (ইপিআই) হিসাবে বদলী হয়ে আসেন। এরআগে তিনি রামেক হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে আলমগীর হোসেনকে মোহনপুরে বদলী করা হয়।

সর্বশেষ সংবাদ

 

রাজনীতি-এর আরও সংবাদ

 



প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: ইফতেখার আলম বিশাল

যোগাযোগ: শিরোইল গৌধুলী মার্কেট ঢাকা বাস টার্মিনাল বোয়ালিয়া রাজশাহী। ই-মেইল: smbishal18@gmail.com, মোবাইল:০১৭৭৫-৫৮৯৫৫৮