নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং এই অঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ পশুর হাট—সিটি হাট। চলতি বাংলা বর্ষে হাটটি ইজারা পেয়েছেন মো: শওকত আলী নামে একজন ব্যবসায়ী।
কিন্তু ইজারাদারের সাথে পুরো প্রক্রিয়া এখনো পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। অথচ ইজারাদার গত দুটি হাটবার থেকে (রোববার ও বুধবার) প্রায় দেড় কোটি টাকা আদায় করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
রাসিক সুত্রে জানা গেছে, দরপত্রের মাধ্যমে ২৫% ভ্যাট-ট্যাক্স সহ মোট ১৬ কোটি ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায় এই ইজারা চূড়ান্ত হয়।
এর মধ্যে ভ্যাট-ট্যাক্সের ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করেন ইজারা গ্রহীতা। আর ইজারার মুল ১২ কোটি ৮১ লাখ টাকার মধ্যে মাত্র অর্ধেক পরিশোধ করেছেন।
সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে শওকত আলী চূড়ান্ত হওয়ার সাত দিনের মধ্যে সমস্ত টাকা পরিশোধ করে অনুমতি পত্র নেওয়ার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শওকত আলী পুরো টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হন।
পরে বিশেষ বিবেচনায় রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে টাকা পরিশোধের জন্য আগামী ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বর্ধিত করা হয়েছে।
সূত্রটি আরও জনিয়েছে, সিটি কর্পোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী প্রাত্যহিক অর্থাৎ সপ্তাহের প্রতিদিন হাট বসার কথা। কিন্তু প্রতিদিন হাট চালু না রেখে সপ্তাহে দুইদিন রোববার ও বুধবার হাট পরিচালনা করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে ইজারাদাররা এ নিয়মেই হাট পরিচালনা করে আসছেন।
এদিকে বর্তমান ইজারাদার শওকত আলী কর আদায়ের চুক্তি পত্র পাওয়ার আগেই হাটটি অবৈধভাবে তাদের দখলে নিয়েছেন। দখলে নেওয়ার পর তিনি গত দুটি হাটবার থেকে (রোববার ও বুধবার) প্রায় দেড় কোটি টাকা আদায় করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত কর হার অনুযায়ী- গরু প্রতি ৭০০ টাকা, মহিষ ৮০০ টাকা এবং ছাগল ৫০০ টাকা আদায় করার নিয়ম। কিন্তু বাস্তবে গরু প্রতি ৮০০ টাকা, মহিষ ১০০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন খামারিরা। অর্থাৎ গরু ও মহিষ প্রতি বাড়তি ৩০০ টাকা করে আদায় করছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা আবু নূর মো. মতিউর রহমান (ডালিম) বলেন, দরপত্র নিয়ম অনুযায়ী সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ না করে ইজারাদার কর আদায় করতে পারবেন না। এটি করা হলে তা বেআইনি।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, অতিরিক্ত কর আদায়ের কারণে হাটের প্রতি ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
তারা আরও বলেন, অতিরিক্ত কর দিয়ে হাটে গরু তোলা হলে লাভ তো দূরের কথা, পুঁজি তুলতেই হিমশিম খেতে হয়।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন হাট ইজারাদার শওকত আলী। তিনি বলেন, “আমরা নিয়ম মেনেই হাট পরিচালনা করছি। সরকার নির্ধারিত দর ছিল মাত্র ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকার মতো, অথচ আমরা প্রায় পাঁচগুণ বেশি দর দিয়ে হাট নিয়েছি।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক নজরুল হুদা বলেন, সিটি কর্পোরেশনকে সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ না করে এবং অনুমতি পত্র ছাড়াই পেশিশক্তি ব্যবহার করে হাটটি দখলে নিয়েছেন ইজারাদার। এটা সম্পুর্ন বেআইনি। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত ও এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত কর আদায়ের ফলে বাজারে গরুর দাম বাড়ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
এত বড় অঙ্কের ইজারা নিলাম ও রাজস্ব আদায় কার্যক্রমে স্বচ্ছতা না থাকলে কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, প্রশাসনিক দুর্নীতিরও আশঙ্কা তৈরি হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে এই হাট ঘিরে আরও জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে তিনি জানান।