ইফতেখার আলম বিশাল: রাজশাহী শহরের উপকণ্ঠ পবা উপজেলার নওহাটা আলাই বিদিরপুর এলাকায় উদ্বোধন হলো এক মানবিক উদ্যোগ—প্রবীণদের সেবা, চিকিৎসা ও বিনোদন কেন্দ্র “সার্ভিস সেন্টার ফর এলডারলি পিপল”। সাড়ে সাত বিঘা জমির উপর গড়ে ওঠা এই কেন্দ্রটি একাধারে একটি ডে-কেয়ার সেন্টার এবং ভবিষ্যতের জন্য সম্ভাবনাময় একটি আবাসিক বৃদ্ধাশ্রম।
এই ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠানটি সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ কিছু মানুষের নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টার ফসল। যার মূলে রয়েছেন নিঃসন্তান এক উদার নারী—রোটারিয়ান লায়লা রওশন (৬৮)। ১৯৯৬ সালে ব্যক্তিগতভাবে জমিটি কিনে ২০০৭ সালে বৃদ্ধাশ্রমের নামে দান করে দেন তিনি। সমাজে যখন অনেকেই পিতামাতাকে বোঝা মনে করেন, তখন লায়লা রওশনের এই মহৎ সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে এক অনন্য নজির হয়ে থাকবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টায় আগত বৃদ্ধদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেয়ার মধ্যদিয়ে বৃদ্ধাশ্রমটি যাত্রা শুরু করে।
প্রতিষ্ঠানটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক সুব্রা রানী ছন্দা, আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আছেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. এস. এম. এ. মান্নান। বর্তমানে এখানে লাইফ টাইম মেম্বার সংখ্যা ১০২ জন এবং পরিচালনা কমিটিতে রয়েছেন দশজন সদস্য।
প্রাথমিকভাবে, প্রতি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত প্রবীণদের জন্য বিনামুল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে। ভবিষ্যতে ধাপে ধাপে এই সেবার পরিসর ও মান আরও বৃদ্ধি পাবে। সম্পূর্ণ অবকাঠামো নির্মিত হলে শুরু হবে আবাসিক ব্যবস্থা, থাকবে বিনোদন, খেলাধুলা ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সুযোগও।
উদ্বোধনী দিনে মোহনপুর ও পবা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত প্রায় ৩০ জন প্রবীণ নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে নাম রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শুরু হয়। সকালের নাস্তায় পরিপূর্ণ আপ্যায়নের পর তাঁদের জন্য আয়োজন করা হয় বিনোদনমূলক নানা অনুষ্ঠানের। দিনটি শেষ হয় খিচুড়ি, সবজি ও মাছের ভোজনের মাধ্যমে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, বৃদ্ধাশ্রমের ভেতরের বিশাল পুকুরঘাটের বাঁধানোর পুরো অর্থায়ন করেন নাজমা খাতুন নামের এক নারী, আর সীমানা প্রাচীর তৈরিতে অবদান রাখেন প্রয়াত কণ্ঠশিল্পী এন্ডু কিশোর।
এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত সকলের স্বপ্ন একটাই—যেনো কোনো বৃদ্ধকে একাকীত্বে দিন কাটাতে না হয়, আর যেনো সমাজের তরফ থেকে প্রবীণদের জন্য থাকে সম্মান, যত্ন ও ভালোবাসা।
সবার মুখে যেনো একই কথা: “বৃদ্ধাশ্রম যেনো আশ্রয় নয়, হয় ভালোবাসার ঘর।”