স্টাফ রিপোর্টার: প্রতারণার মামলায় চার্জশীটভুক্ত আসামি হয়েও বহাল তবিয়তে রয়েছেন বগুড়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হক। এরআগে তিনি রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) অধ্যক্ষ থাকাকালে তার বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করা হয়। পরে সিআইডির তদন্তে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি চার্জশীটভুক্ত আসামি হন। এক পর্যায়ে তাকে বগুড়া টিটিসিতে বদলী করা হয়। এদিকে সরকারি কোনো কর্মচারী চার্জশীটভুক্ত আসামি হলে সাময়িক বহিস্কার হওয়ার বিধান থাকলেও অধ্যক্ষ এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে কোনো ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ ও বাংলাদেশ গেজেট অনুযায়ী- তার বহিস্কার হওয়ার কথা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
পতিত আ’লীগ সরকারের কিছু মন্ত্রী, এমপি ও দলটির কতিপয় নেতার অত্যন্ত ঘণিষ্ঠ হিসেবে বহুল পরিচিত এই অধ্যক্ষ নিয়মিত অফিস করছেন। পাশাপাশি তিনি অন্যান্য দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডও নিয়মিত পরিচালনা করছেন। কিন্তু চার্জশীটভুক্ত আসামি হলেও অজ্ঞাত কারণে তাকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়নি। তার বিরুদ্ধে প্রায় তিন বছর আগে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দাখিল করে পুলিশ।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রাজশাহী সিআইডির ইন্সপেক্টর আনিসুর রহমান এরআগে জানিয়েছিলেন, মামলার এজাহারে প্রথমে আসামি ছিলেন দুইজন। তবে ওই দুই আসামির মধ্যে অধ্যক্ষ এমদাদুল হকের নাম ছিল না। পরে ঘটনাটি তদন্তকালে টিটিসির অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হকসহ আরো দুইজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। তদন্তে উঠে আসা প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হকসহ মোট চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলাটির বাদী হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান।
বর্তমানে মামলাটির চার আসামিই আসামি জামিনে রয়েছেন বলে জানা গেছে। সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ অনুযায়ী বাংলাদেশ গেজেটের দশম অধ্যায়ের ৩৯ এর (২) এ বলা হয়েছে, কোনো কর্মচারী দেনার দায়ে কারাগারে আটক থাকিলে, অথবা কোনো ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার হইলে বা তাহার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গৃহীত হইলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ উক্তরুপ আটক, গ্রেফতার বা অভিযোগপত্র গ্রহণের দিন হইতে তাহাকে সাময়িক বরখাস্ত করিতে পারিবে।
অধ্যক্ষ এমদাদুল রাজশাহী টিটিসিতে থাকাকালে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা নানা কর্মসূচি পালন করেন। তারা সংবাদ সম্মেলন, বিক্ষোভ কর্মসূচি, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দেওয়াসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন।
অধ্যক্ষ এমদাদুল হক রাজশাহী টিটিসিতে থাকাকালে তার বিরুদ্ধে একই প্রতিষ্ঠানের নারী চীফ ইনস্ট্রাক্টর (জেনারেল ইলেকট্রনিক্স) সাঈদা মমতাজ নাহরীনা ইকবালকে আপত্তিকর প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। অধ্যক্ষের আপত্তিকর ও অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বিভিন্ন অজুহাতে ওই নারী চীফ ইনস্ট্রাক্টরকে হয়রানি করা এবং হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালকের (ডিজি) কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন ভুক্তভোগী চীফ ইনস্ট্রাক্টর সাঈদা মমতাজ নাহরীনা ইকবাল। এসব বিষয় নিয়ে ইতোপূর্বে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে বগুড়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এসএম এমদাদুল হকের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।