• রাজশাহী, বাংলাদেশ
  • ৯ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • নিবন্ধন এর জন্য আবেদনকৃত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  • news@sonybangla.news
  • ০১৭৭৫-৫৮৯৫৫৮

রাজশাহীতে টেক্সটাইল মিলসের বৃক্ষ নিধন ও পুকুর ভরাটের প্রতিবাদে মানববন্ধন

প্রকাশ: সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫ ১০:৪২

রাজশাহীতে টেক্সটাইল মিলসের বৃক্ষ নিধন ও পুকুর ভরাটের প্রতিবাদে মানববন্ধন

ইফতেখার আলম বিশাল: রাজশাহীতে টেক্সটাইল মিলসের শত শত গাছ নিধন এবং পুকুর ভরাটের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে পরিবেশ সংগঠনগুলো।

রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসের শতাধিক গাছ নির্বিচারে হত্যা এবং বিশাল আকৃতির পুকুর ভরাট বন্ধের দাবিতে আজ (১০ মার্চ) সোমবার সকালে রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসের সামনে অনুষ্ঠিত হয় মানববন্ধন। বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম ও সবুজ সংহতির উদ্যোগে আয়োজিত এই মানববন্ধনে স্থানীয় যুবকরা একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ জানান এবং স্মারকলিপি প্রদান করেন।

বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান আতিক এবং সবুজ সংহতি রাজশাহী মহানগরের সদস্য সচিব মো. নাজমুল হোসেন রাজু’র নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচি রাজশাহীর পরিবেশ আন্দোলনে একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছে।

এর আগে গত ৮ মার্চ সনি বাংলা অনলাইন নিউজ পোর্টালে ‘পরিবেশ বিপর্যয়ের পথে রাজশাহী: প্রাণ-আরএফএল কর্তন করলো শত শত গাছ, ভরাট হলো পুকুর’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এই প্রতিবাদ কর্মসূচি হাতে নেয়।

মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, “রাজশাহী টেক্সটাইল মিলস এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ একসময় ছিল সবুজে আচ্ছাদিত। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে এখানে শত শত গাছ নির্বিচারে কেটে ফেলা হয়েছে এবং বিশাল পুকুরটি ভরাট করা হয়েছে, যা এলাকার তাপমাত্রা এবং পরিবেশে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।”

বক্তারা আরও বলেন, “সরকার, স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি, যাতে এই পরিবেশ ধ্বংসের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হয় এবং ভরাটকৃত পুকুরটি পুনরুদ্ধার করা হয়। এছাড়া কর্তণকৃত বৃক্ষের জায়গায় দেশীয় জাতের বনজ, ফলজ ও ঔষুধি বৃক্ষ রোপন করা। ঐতিহ্যবাহী এই টেক্সটাইল মিলটির লিজ বাতিল করে, সেখানকার গাছগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ।. পাশাপাশি,   নগরের ১০-১২% এলাকা জলাশয় ও ১৫% বনভূমি থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার।”

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন রাজশাহীর রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও জুলাই ৩৬ পরিষদ এর সদস্য মাহবুব জামাল কাদেরী, পরিবেশ আইন গবেষক মো. শহিদুল ইসলাম, সেভ দি নেচার এন্ড লাইফের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান, আদিবাসী যুব পরিষদ রাজশাহী মহানগরের সভাপতি উপেন রবিদাস, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক নাদিম সিনা, ভাইব্রেন্ট ভিশিওনারিজ নেটওয়ার্ক এর উপদেষ্টা হাসিবুল হাসনাত রিজভি, স্থানীয় বাসিন্দা মমিনুজ্জামান টেকনসহ প্রমুখ।

পরবর্তী সময়ে, একই দাবীসম্বলিত একটি স্মারকলিপি রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার-এর কাছে পেশ করা হয়।

উল্লেখ্য: রাজশাহীতে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় রাজশাহী থেকে প্রকাশিত এবং জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সনি বাংলায় সংবাদটি প্রকাশ হয়। সংবাদ সুত্রে-দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল সম্প্রতি রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসের বিশাল পুকুর ভরাটের পাশাপাশি কর্তন করেছে কয়েকশ’ গাছ। স্থানীয়রা বলছেন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর এটির ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

জানা গেছে ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী টেক্সটাইল মিলস ২০২৪ সালের অক্টোবরে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) চুক্তির মাধ্যমে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের কাছে ৩০ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়। চুক্তির পর মিলটির নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘বরেন্দ্র টেক্সটাইল মিলস’। চুক্তি অনুযায়ী, মিলটি পরিচালনার দায়িত্ব পেলেও, এত সংখ্যক গাছ কর্তন ও পুকুর ভরাটের কোনো অনুমতি ছিল কিনা, সে প্রশ্ন উঠেছে।

পরিবেশবিদরা বলছেন, শত শত গাছ কেটে ফেলার ফলে এলাকার তাপমাত্রা বেড়ে যাবে, বাতাসের মান খারাপ হবে এবং কার্বন নিঃসরণ বাড়বে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, “আমাদের এলাকার অক্সিজেন ভান্ডার একের পর এক ধ্বংস করা হচ্ছে। বনবিভাগের ২০৫টি গাছ কাটার ধকল সামলানোর আগেই নতুন করে শত শত গাছ নিধন করা হলো।”

এ বিষয়ে প্রাণ-আরএফএল-এর স্থানীয় এজিএম শরিফ উদ্দিন বলেন, “আমরা পুরো মিল ৩০ বছরের জন্য লিজ নিয়েছি, সব স্থাপনা ব্যবহার করবো, তাই গাছ কাটা ও পুকুর ভরাটের প্রয়োজন পড়েছে।” তবে বনবিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

প্রাণ-আরএফএল কর্তৃপক্ষ এর আগে মিলের উচ্চমূল্যের মেশিনারিজ গোপনে সরিয়ে নিতে চেয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, গভীর রাতে এসব ভারি মেশিন স্থানান্তরের সময় বাধা দিলে পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিষয়টি সমাধান করা হয়। পরিবেশবিদরা আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতে আরো গাছ কাটা হলে এলাকার পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।

পরিবেশ রক্ষা ও টেকসই শিল্পায়নের স্বার্থে এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত করা প্রয়োজন। স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেটাও এখন দেখার বিষয়। এ ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যাতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ধ্বংস না করে, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।

সর্বশেষ সংবাদ

 

রাজনীতি-এর আরও সংবাদ

 



প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: ইফতেখার আলম বিশাল

যোগাযোগ: শিরোইল গৌধুলী মার্কেট ঢাকা বাস টার্মিনাল বোয়ালিয়া রাজশাহী। ই-মেইল: smbishal18@gmail.com, মোবাইল:০১৭৭৫-৫৮৯৫৫৮