রাজশাহী প্রতিনিধি: হাসিনা তুষ্টিতে রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষের অপসারণ সহ ৩ দফা দাবি জানিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দরা। এদিকে অধ্যক্ষের কান্ডে ব্যপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে।
ছয় মাস আগেই ফ্যাসিস্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতায় রয়েছে বিপ্লবীদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরই মধ্যে বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সরেছে শেখ হাসিনার ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। বাতিল হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ছবি এবং শেখ হাসিনার বাণী সম্বলিত স্লোগান। কিন্তু তারপরও স্ব প্রণোদিত হয়ে রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ কালাচাঁদ শীল দাফতরিক কাগজপত্রে শেখ হাসিনার শ্লোগান সম্বলিত লোগো ব্যবহার অব্যাহত রেখেছেন। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ হওয়ার পর ক্ষোভ ও অসন্তোষের প্রতিফলন ঘটেছে রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের ক্যাম্পাস সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মাঝে।
এদিকে গণঅভ্যুত্থান মঞ্চের পক্ষ থেকে ৩ দফার দাবি তুলেছেন রাজশাহীর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা। তাদের দাবি- অধ্যক্ষ কালাচাঁদ শীলের কর্মকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে তাকে দ্রুত স্থায়ী বহিষ্কার করা হোক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে একটি স্থায়ী ও কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করা হোক এবং শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনৈতিক শ্লোগান বা প্রতীক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক।
কলেজটির দাফতরিক বিভিন্ন কাগজপত্র ঘেঁটে ও যাচাই করে দেখা গেছে, অধ্যক্ষের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি, একাধিক ডিজাইন ও সাইজের খামে ‘শিক্ষা নিয়ে গড়বো দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ লেখা সম্বলিত লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ কালাচাঁদ শীল স্বাক্ষরিত ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের দ্বাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন খাতে নির্ধারিত হারে বেতন ও সেশনচার্জ পরিশোধ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে এই শ্লোগান ব্যবহার করা হয়েছে। এই বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যক্ষ স্বাক্ষর করেছেন গত ৪ সেপ্টেম্বর। ডিসেম্বরের দিকে টেস্ট পরীক্ষার খাতাতেও রয়েছে শেখ হাসিনার প্রশংসা সম্বলিত লোগো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, গত ৫ আগস্টের পর এই লোগো সম্বলিত খাম নজরে এসেছে। আমরা ধারণা করছি ৫ আগস্টের পরই খামগুলো ছাপা হয়েছে। বিষয়টি কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এছাড়া বিজ্ঞপ্তিতেও ‘শিক্ষা নিয়ে গড়বো দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ লেখা সম্বলিত লোগো ব্যবহার করা হয়েছে।
পুলিশ প্রশাসন থেকে বিভিন্ন সচিবালয় ও মন্ত্রণালয়ের রয়েছে অধ্যক্ষের নিবিড় সম্পর্ক। যার কারণে বহু শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবিষয়ে আপত্তি জানানোর পরও উল্টো সেসব কাগজ ব্যবহার করতে নির্দেশ দেন তিনি। তার বেপরোয়া আচরণ এবং কূটকৌশলের কারণে অনেকেই অধ্যক্ষের অন্যায় কর্মের বিরুদ্ধাচারণ করতে ভয় পান বলে জানান তারা।
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াসিফ আব্দুল্লাহ বলেন, বিষয়টি আমাদের চোখে পড়ার পর আমরা প্রিন্সিপালকে সতর্ক করেছিলাম। কিন্তু তারপর এখনোও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী সহ অনেকের মধ্যে অসন্তোষের দানা বেঁধেছে। নতুন বাংলাদেশে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে দল মত নির্বিশেষে আবারও মাঠে নামবো।
হাসিনা বন্দনার বিষয়ে কথা হয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মেহেরুন্নেসা ও ইসলামি শিক্ষা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তৌহিদুল হক যৌথভাবে বলেন, একটি গণ-অভ্যুত্থানের পর যে সরকার গঠিত হয়েছে সেই সরকারের পলিসির সঙ্গে এমন ঘটনা বেমানান। অবশ্যই এমন ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্হা নেওয়া প্রয়োজন।
গত ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন ডিজাইনের একাধিক খামে এবং বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত লোগো ব্যবহার করা হয়েছে জানালে অধ্যক্ষ কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ কালাচাঁদ শীল বলেন, এর রকম হয়ে থাকলে আমি দু:খিত। এটা ভুলবশত হয়ে থাকতে পারে।
রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের শ্লোগানযুক্ত লোগো ব্যবহারের নিন্দা ও দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি। এব্যাপারে গণঅভ্যুত্থান মঞ্চের আহ্বায়ক জাহিদ হাসান জোহা ও সদস্য সচিব ইকরামুল হক মানুন যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ কালাচাঁদ শীল দাফতরিক কাগজপত্রে স্বৈর শাসকের যে রাজনৈতিক শ্লোগান সম্বলিত লগো ব্যবহার করেছেন, তা তার নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব এ ধরনের কর্মকাণ্ড দ্বারা মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এটি কেবল একজন অধ্যক্ষের দায়িত্বের পরিপন্থী নয়, বরং শিক্ষার পরিবেশকে রাজনৈতিক মেরুকরণের মাধ্যমে কলুষিত করার শামিল। কালাচাঁদ শীলের কর্মকাণ্ড এই নীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং এটি শিক্ষাক্ষেত্রে অরাজকতা সৃষ্টির শামিল।