• রাজশাহী, বাংলাদেশ
  • ৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • নিবন্ধন এর জন্য আবেদনকৃত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  • news@sonybangla.news
  • ০১৭৭৫-৫৮৯৫৫৮

সাবেক এমপি’র অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য/ রাজশাহী কোর্ট কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগকে অবৈধ দাবি কর্মরতদের

প্রকাশ: রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:২৫

সাবেক এমপি’র অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য/ রাজশাহী কোর্ট কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগকে অবৈধ দাবি কর্মরতদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী কোর্ট কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রবিউল আলম ও অফিস সহকারি (খন্ডকালীন) মোয়াজ্জেম হোসেনকে নিয়ে কর্মরতদের মাঝে চলছে সমালোচনার ঝড়। বিগত সরকারের আমলে সদর আসনের সাবেক এমপি ও গভর্নিং বডির সভাপতির প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় উক্ত নিয়োগপ্রক্রিয়াটি সমালোচিত হলেও; আজ অবদি সেটির কোন সুরাহা হয়নি বলে দাবি কর্মরতদের। বিগত সরকারের ্আমলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রবিউল আলমের নিয়োগটি অবৈধ হবার পরেও বিভিন্ন দেনদরবার করে এখনো তিনি অধ্যক্ষের আসনে রয়েছেন বহাল তবিয়তে বলে দাবি কর্মরতদের। সাবেক আওয়ামী সরকারের ক্ষমতার বলে চারজন জৈষ্ঠ্য শিক্ষককে ডিঙ্গিয়ে অলৌকিকভাবে তিনি দখল করেছেন অধ্যক্ষের পদ। বৈষম্যের স্বীকার ও অধিকার বঞ্চিত শিক্ষকদের দেয়া তথ্যমতে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে সরাসরি অমান্য করা হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯ সালের রেগুলেশন। তৎকালিন কলেজ কমিটির সভাপতি ও সাবেক সদর এমপি রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করেন বেশ তড়িঘড়ি করে, বলে জানান কলেজের কর্মরতরা।

এদিকে, অধ্যক্ষ রবিউল আলমের পাশাপাশি সমালোচনার ঝড় বইছে, অর্থকেলেঙ্কারির সাথে জড়িত থাকা অধ্যক্ষের খুব কাছের এক কর্মচারিকে নিয়েও। চাকরি থেকে অব্যাহতি নেয়া ভুগোল বিভাগের প্রভাষক আবু তাহেরের অনুপস্থিতিতে তার স্বাক্ষর জাল করে প্রায় ১৩ মাস বেতন ভাতা উত্তোলন করেছেন অফিস সহকারি মোয়াজ্জেম হোসেন। আর এই অপকর্মের সাথে বর্তমান দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রবিউল আলমের রয়েছে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা বলেও জানান কর্মরতরা। একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তা-ব্যক্তিদের কাছে এই অপকর্ম ধরা পড়লে শাস্তিস্বরূপ অভিযুক্ত মোয়াজ্জেম হোসেন কর্তৃক আত্মসাৎকৃত একলাখ বিশ হাজার টাকা কলেজ ফান্ডে ফেরত দেন তিনি। কলেজটিতে উপাধ্যক্ষের কোন পদ থাকলেও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পরিসংখ্যান বিভাগের একজন প্রভাষক হয়েও নিজেকে পরিচয় দিতেন উপাধ্যক্ষ হিসেবে। পূর্ববর্তী সময়ের কলেজ সভাপতি ও রাজশাহী সদর আসনে এমপি ফজলে হোসেন বাদশার মাধ্যমে তিনি এই উপাধ্যক্ষের নিয়োগ প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করান। কিন্তু তার কয়েকবছর পর সংশ্লিষ্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অডিট কর্তারা সেই নিয়োগ কেনো অবৈধ নয় মর্মে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশও দেন। এছাড়াও, রাজশাহী’র ঐসময়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. কামরুজ্জামান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চলের উপ-পরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী ও জেলা শিক্ষা অফিসার মোহা. নাসির উদ্দিন স্বাক্ষরিত গত ০৬-৪-২০২১ ইং তারিখের একটি প্রতিবেদনের সুপারিশ অংশে বলা হয়েছে, ‘উপাধ্যক্ষ মো. রবিউল আলম একই প্রতিষ্ঠানে প্রভাষক পদ থেকে পদত্যাগ না করে উপাধ্যক্ষ পদে যোগদান করে অদ্যাবধি দুইটি পদে বহাল থেকে কলেজের সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে আসছেন; যা চাকুরি বিধি সম্মত নয়। যেহেতু তিনি উপাধ্যক্ষ পদে যোগদান করেছেন সেহেতু তাকে প্রভাষক পদ থেকে পদত্যাগ করার জন্য বলা যেতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষা পরিদর্শক ড. এনামুল হক কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি প্রতিবেদনের স্টাপিং প্যাটার্ন সংক্রান্ত তথ্য ও মন্তব্যস্থলে লিখেন, ‘প্রতিষ্ঠানটিতে প্যাটার্ন অতিরিক্ত কোন শিক্ষক-কর্মচারি এমপিও ভুক্ত নেই। এবং প্রতিষ্ঠানটিতে উপাধ্যক্ষের পদ শূন্য আছে।
কিন্তু, তৎকালিন সরকারের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে সেই প্রতিবেদনগুলোর বিপরীতে তেমন একটা সফলতা আসেনি। অবশেষে, উপাধ্যক্ষ (সৃষ্টপদ) ও প্রভাষক উভয় পদধারী সেই শিক্ষকই অবৈধপন্থায় নিয়োগ পেয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে বলে জানান কলেজে কর্মরতরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মরতরা বলেন, ঐসময় তড়িঘড়ি করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের পেছনে সাবেক সদর এমপি (রাজশাহী-০২) হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। সে টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়েছে বেশ কয়েকজনের মধ্যেও বলে জানান কর্মরতরা।
বেশকিছু কাগজীয় ডকুমেন্ট উপস্থাপনের মাধ্যমে কলেজে কর্মরতরা জানান, গত ১৩-০২-২০২৪ ইং তারিখে তৎকালিন অধ্যক্ষ এ,কে,এম কামরুজ্জামান জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে আব্দুল্লাহ ইউসূফকে কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়ে অবসর নেন। অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণের পাঁচদিন না যেতেই, ১৮-০২-২০২৪ তারিখে সদর এমপি শফিকুর রহমান বাদশা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তাকে লবিং করে মেয়াদ পূর্ণের একমাস পূর্বেই গভর্নিং বডি (কলেজ কমিটি) ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কমিটির নাম ঘোষণা করেন। উক্ত কমিটিতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেন নিজ দলের (আওয়ামী লীগ) অনুরাগী ও সমর্থক রাজকুমার সরকারকে। আর বিদ্যোৎসাহী সদস্য করেন রইসূদ্দীনকে।
কলেজের সভাপতির দায়িত্ব পেয়ে রাজকুমার সরকারও সদর এমপি বাদশার মতো; কালবিলম্ব না করে ঐদিনই (১৮-০২-২০২৪) সদ্য দায়িত্ব পাওয়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ ইউসূফকে সভা আহ্বানের নির্দেশ দেন। নির্দেশনার আটদিন পর ২৭-০২-২০২৪ তারিখে গভর্নিং বডির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভার কার্যপত্রে অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়টি অন্তুর্ভূক্ত ছিলনা বলে দাবি কর্মরতদের। পরবর্তী সময়ে সুকৌশলে উক্ত কার্যপত্রে অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়টি সংযোজন করে সদ্য দায়িত্ব পাওয়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ ইউসূফকে কোন কারণ ব্যতীরেকেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এবং তার পরেরদিন ২৮ ফেব্রুয়ারি’২০২৪ তারিখে রবিউল আলমকে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। আওয়ামী সরকারের মদদপুষ্ট ও সাবেক এমপি শফিকুর রহমান বাদশা ও কলেজ সভাপতির ঘনিষ্ট শিক্ষক পরিসংখ্যান বিভাগের প্রভাষক রবিউল আলমের সেই নিয়োগ নিয়ে তখন থেকে এখন অবদি কলেজজুড়ে চলছে সমালোচান।
রবিউল আলম ঐকলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেনীর পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তাই কলেজ শাখার কোন প্রভাষক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বিধির রেগুলেশনুযায়ী ডিগ্রী ও অনার্স লেভেলের কোন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হতে পারেন না। এছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বিধি অনুযায়ী জৈষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বের কথা বলা থাকলেও, রবিউল আলমের ক্ষেত্রে সে নিয়োমটিকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে বলে মন্তব্য সিনিয়র শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের।
নিজের চেয়ার অটুট রাখার উদ্দেশ্যে তিনি ৫ আগস্টের পর থেকে এখন কৌশলে হাত মিলিয়েছেন স্থানীয় জামায়াত-বিএনপি’র কিছু প্রভাবশালী নেতার সাথে বলেও জানান কর্মরতরা।
জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রবিউল আলম বলেন, গত ১০-১১-২০১৬ তারিখে আমি উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করি। নির্বাচনী বোর্ডের সুপারিশ ও ২৫-১০-২০১৬ তারিখের গভর্নিং বডির সভার সিদ্ধান্ত’র কথা উল্লেখপূর্বক তৎকালিন কলেজ সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা (সাবেক রাজশাহী সদর-২ আসনের এমপি) আমাকে উপাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন। তবে, ঐসময় উপাধ্যক্ষ পদটি এমপিওভুক্ত ছিলনা। আমি কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ থাকার পরেও আব্দুল্লাহ ইউসূফকে অন্যায়ভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদে বসানো হয়েছিল। এখন যারা আমাকে নিয়ে সমালোচনা করছে তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্যই পরিকল্পিতভাবে পানি ঘোলা করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

সর্বশেষ সংবাদ

 

রাজনীতি-এর আরও সংবাদ

 



প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: ইফতেখার আলম বিশাল

যোগাযোগ: শিরোইল গৌধুলী মার্কেট ঢাকা বাস টার্মিনাল বোয়ালিয়া রাজশাহী। ই-মেইল: smbishal18@gmail.com, মোবাইল:০১৭৭৫-৫৮৯৫৫৮