• রাজশাহী, বাংলাদেশ
  • ৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • নিবন্ধন এর জন্য আবেদনকৃত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  • news@sonybangla.news
  • ০১৭৭৫-৫৮৯৫৫৮

মানুষ পেটানোয় ওস্তাদ এডিসি হারুন, ‍বাদ পড়েননি পুলিশও!

প্রকাশ: রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ৬:৪৬

মানুষ পেটানোয় ওস্তাদ এডিসি হারুন, ‍বাদ পড়েননি পুলিশও!

অনলাইন ডেস্ক: সহকর্মী পুলিশ সদস্য, সাংবাদিক, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী– কেউ বাদ যাননি; সবাইকেই পিটিয়েছেন রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ। দাবি-দাওয়া নিয়ে শাহবাগ চত্বরে আন্দোলনকারী হলে তো কথাই নেই– এডিসি হারুনের হাতে মার খেয়েছেন প্রায় সবাই।

পুলিশ কর্মকর্তা হারুনের এমন আক্রমণাত্মক ও আপত্তিকর ‘অ্যাকশন’ অনেক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা পছন্দ করেন না। পুলিশের ভেতরে তাকে নিয়ে বিভিন্ন সময় আলোচনাও হয়েছে। বাইরেও বিভিন্ন সময় সমালোচনা হয়েছে তাকে নিয়ে; নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। তারপরও মানুষ পেটানোকে অভ্যাসে পরিণত করা হারুনের বিরুদ্ধে এর আগে কখনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।

সবশেষ ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে নির্মম নির্যাতন করেন এডিসি হারুন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ এবং ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সমালোচনার পর তাকে রমনা জোন থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাকে পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) বদলি করা হচ্ছে বলে প্রথমে জানিয়েছিলেন ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে পরে তাকে এপিবিএন-এ বদলি করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ হেড কোয়ার্টার।

dhakapost

এডিসি হারুনের পেটানোর ‘সংস্কৃতি’

এ বছরের ১৫ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের দিন পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। লাঠিচার্জে আহত হন এটিএন নিউজের রিপোর্টার জাবেদ আক্তার, আজকের পত্রিকার রিপোর্টার এস এম নূর মোহাম্মদ ও জাগো নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার ফজলুল হক মৃধাসহ দেশের শীর্ষ গণমাধ্যমের অন্তত ১৫ জন সংবাদকর্মী। সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন, সম্পূর্ণ অমানবিক প্রক্রিয়ায় মারধরের এ ঘটনায় নেতৃত্ব দেন এডিসি হারুন।

ওই দিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন সাংবাদিক জানান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত অডিটোরিয়ামে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিতে বিক্ষোভ করছিলেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।

তাদের অডিটোরিয়াম থেকে বের করে দেওয়ার জন্য সেখানে প্রবেশ করেন বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য। তারা সেখানে ঢুকেই বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের ওপর লাঠিচার্জ করেন। এ ঘটনার ছবি ও ভিডিও ফুটেজ নিচ্ছিলেন সাংবাদিকরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অতর্কিতভাবে সাংবাদিকদের মারধর ও লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। এই আক্রমণে নেতৃত্ব দেন এবং অন্যদের অর্ডার করেন এডিসি হারুন।

গত বছরের ৭ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে শাহবাগে একটি সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামি আবদুল্লাহ। পুলিশের লাঠিচার্জে তার মাথা ফেটে যায়, পড়ে ১৪টি সেলাই। ওই শিক্ষার্থী জানান, সেদিন ‘শান্তিপূর্ণ’ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ব্যাপক লাঠিপেটা করে পুলিশ। তিনিসহ অন্তত ১২ জন আহত হন। সেদিনের ঘটনাতেও নেতৃত্ব দেন রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ।

dhakapost

নিউমার্কেটে ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সময় নিজের সহকর্মীকেই চড় মেরে সমালোচিত হন এডিসি হারুন। সেসময় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের দিকে রাবার বুলেট ছুড়তে এক কনস্টেবলকে নির্দেশ দেন তিনি। ‘বুলেট শেষ হয়ে গেছে’ বলায় ওই কনস্টেবলকে চড় মারেন তিনি।

শাহবাগের একটি আন্দোলন কর্মসূচিতে এডিসি হারুন নিজে লাঠি দিয়ে বিক্ষোভকারীদের পেটাচ্ছেন— এমন ভিডিও ফেসবুকে বেশ কয়েকবার ভাইরাল হয়েছে।

ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারী সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে শাহবাগ মোড়ে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন। এমন সময় এডিসি হারুন অর রশিদ ও তার অন্য সহকর্মীরা বিক্ষোভকারীদের পেটাতে শুরু করেন। পেটানো শুরুর আগে হারুনের গায়ে জ্যাকেট এবং মাথায় হেলমেট পরিয়ে দেন সহকর্মীরা। হেলমেট পরানোর সঙ্গে সঙ্গেই তিনি প্রচণ্ড মারমুখী হয়ে ওঠেন। সেদিন তিনি ও তার সহকর্মীরা বিক্ষোভকারীদের অমানুষিকভাবে লাঠিপেটা করেন।

গত বছরের ৪ মার্চ গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়। ঢাকা ক্লাবের সামনে উপ-কমিশনার হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর অতর্কিত লাঠিচার্জ করে।

dhakapost

এছাড়া গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এডিসি হারুনের নেতৃত্বে পুলিশ ছাত্রদলের ‘শান্তিপূর্ণ’ সমাবেশে হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছিল।

২০২১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে বিচার চেয়ে শাহবাগে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও অন্যান্য বাম সংগঠন আয়োজিত মশাল মিছিলেও তার নেতৃত্ব পুলিশ লাঠিপেটা করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

‘সরকার হারুনকে ব্যবহার করেছে’

বিভিন্ন সময় এডিসি হারুনের হামলার শিকার সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, কোনো গণতান্ত্রিক ও ন্যায্য দাবির আন্দোলনে পুলিশ মারধর-লাঠিচার্জ তো দূরের কথা, বাধাই দিতে পারে না। সেখানে অনেকবার পুলিশ হামলা করেছে, মারধর ও লাঠিচার্জ করেছে। এই এডিসি হারুন ছিল এসব হামলায় প্রথম সারিতে। তিনি নিজে পিটিয়েছেন, পেটানোর নির্দেশ ও নেতৃত্ব দিয়েছেন। তখন কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আজ ছাত্রলীগের দুই নেতাকে পিটিয়েছে বলে তিনি বদলি হলেন।

dhakapost

সালমান সিদ্দিকী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে। পুলিশ বাহিনীর জন্য এটা একটা ম্যাসেজ হোক। যেন আর কোনো পুলিশ কর্মকর্তা অন্যায়ভাবে কাউকে মারধর, নির্যাতন কিংবা লাঠিচার্জ করার সাহস না পান।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের নির্যাতনের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এডিসি হারুন উগ্র মেজাজের কর্মকর্তা। আন্দোলন, বিক্ষোভে বিভিন্ন সময় দেখেছি, এডিসি হারুনের নেতৃত্বে পুলিশ অনেক বেপরোয়া ছিল। আমি নিজেও তার মার খেয়েছি।’

এডিসি হারুনদের সরকার দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করেছে দাবি করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, কাউকে পুলিশ কর্তৃক মারধর কিংবা পুলিশি নির্যাতন সমর্থন করি না। সরকার আসলে দলীয় স্বার্থে পুলিশকে ব্যবহার করছে। যেখানে তাদের স্বার্থরক্ষা হয় সেখানে পুলিশকে ব্যবহার করছে, পুরস্কৃত করছে। যেখানে ক্ষুণ্ন হচ্ছে সেখানে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ সংস্কৃতি পুরো প্রশাসন ব্যবস্থাকে ভেঙে দিচ্ছে। এটা বাংলাদেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর হচ্ছে।

dhakapost

ঔদ্ধত্যের মূলে সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতির সঙ্গে বন্ধুত্ব!

গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ছাত্র অধিকার পরিষদের একাধিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে এডিসি হারুনের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। তিনি নিজেই আমাদের নেতাকর্মীদের পিটিয়েছেন, গলা টিপে ধরেছেন। আমরা জানতে পেরেছি, তিনি ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সোহাগের বন্ধু। ওই পরিচয়ের জোরেই তিনি একের পর এক অপেশাদার আচরণ করে যাচ্ছেন। আমরা তার চাকরিচ্যুতির দাবি করছি।

সুপ্রিম কোর্টে পুলিশের লাঠিচার্জে আহত এটিএন নিউজের রিপোর্টার জাবেদ আক্তার বলেন, সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও পুলিশ সেদিন আমাকে পায়ের নিচে ফেলে পিটিয়েছে, অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও নির্যাতন করেছে। এই আক্রমণের নেতৃত্বে দেখা গেছে এডিসি হারুনকে। তার বিরুদ্ধে নানা সময়ে নির্যাতন-মারধরের অভিযোগ ছিল। এসব ঘটনায় যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হতো, তাহলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটত না।

থানায় নিয়ে নির্যাতন-মারধর গুরুতর অপরাধ

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, পুলিশ পাবলিককে পেটাতে পারে না। যদি জান ও মালের ক্ষয়ক্ষতির হুমকি থাকে, পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে পুলিশ শক্তিপ্রয়োগ করতে পারে। কিন্তু থানা হেফাজতে কাউকে নির্যাতন করা কিংবা পেটানো গুরুতর অপরাধ।

প্রত্যাহার আদৌ কোনো শাস্তি কি না– জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা কোনো শাস্তি নয়, তবে শাস্তির প্রাথমিক ধাপ। কারণ, অভিযোগ উঠলেই কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। তদন্ত করে বা অভিযোগ খতিয়ে দেখে তারপর শাস্তি নিশ্চিত করতে হয়। তদন্ত নিরপেক্ষ করতে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়।

ছাত্রলীগ নেতাদের পোটানোসহ অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে জানতে এডিসি হারুন অর রশিদকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। সুত্র ঢাকা পোস্ট

সনি বাংলা ডট কম/ইআবি

সর্বশেষ সংবাদ

 

রাজনীতি-এর আরও সংবাদ

 



প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: ইফতেখার আলম বিশাল

যোগাযোগ: শিরোইল গৌধুলী মার্কেট ঢাকা বাস টার্মিনাল বোয়ালিয়া রাজশাহী। ই-মেইল: smbishal18@gmail.com, মোবাইল:০১৭৭৫-৫৮৯৫৫৮