• রাজশাহী, বাংলাদেশ
  • ৫ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • নিবন্ধন এর জন্য আবেদনকৃত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  • news@sonybangla.news
  • ০১৭৭৫-৫৮৯৫৫৮

মাদক মামলার আসামি থেকে চেয়ারম্যান: ‘সোহেল রানার উত্থান কাহিনি’

প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৭ মে, ২০২৫ ৪:০৯

মাদক মামলার আসামি থেকে চেয়ারম্যান: ‘সোহেল রানার উত্থান কাহিনি’

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহেল রানা। ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পলাতক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-৩ আসনের সাবেক এমপি আসাদুজ্জামান আসাদের ঘনিষ্টজন। এছাড়াও চরম সখ্যতা ছিলো তানোর-গোদাগাড়ি আসনের সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর সাথে সোহেলের ছিল দহরম মহরম। আওয়ামী লীগের প্রতিটি কর্মসূচিতে ফারুক চৌধুরীর হয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করতো সোহেল। প্রতিটি দলীয় কর্মসূচীতে সোহেল উপস্থিত

থাকতেন সামনের সারিতে।

পুলিশের তালিকাভুক্ত এই মাদকব্যবসায়ী গত ৫ আগস্টের পর কিছুদিন ছিলেন আত্মগোপনে। স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাকে ম্যানেজ করে আবার প্রকাশ্যে চালিয়ে যাচ্ছেন তার পূর্ববর্তী মাদক ব্যবসা ও কর্মকান্ড বলে জানান স্থানীয়রা। এলাকার সব আওয়ামী লীগ নেতা যখন আত্মগোপনে, তখন সুবিধাভোগী সোহেল রানা এখনো ‘বীরদর্পে’।

সোহেল রানা অবশ্য দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তাই চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তবে কয়েকদিন থেকে পরিষদে যাওয়া বন্ধ রেখেছেন।

গোদাগাড়ীর তালিকাভুক্ত শীর্ষ হেরোইন ব্যবসায়ী ও নাশকতা মামলার আসামি সোহেল রানা ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ও ক্রসফায়ারের আতঙ্কে আত্মগোপনে ছিলেন।
সেখান থেকে ফিরে ২০২১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে, গত এক যুগে মাদকের ব্যবসা থেকে সোহেল বনেছেন বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক। যা এসেছে মূলত হেরোইন ব্যবসা করে । টাকার জোরেই ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান হয়েছেন তিনি, বলে জানান স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা আরো জানান, ৩৪ বছর বয়সী সোহেলের বাবা মজিবুর রহমান ছিলেন বাসের চালক। ১৫ বছর আগে সোহেল বাসের হেলপারি করতেন। মাত্র দেড় দশকের ব্যবধানে তিনি এখন কোটি টাকার মালিক। তিনি পুলিশের হাতে হেরোইনসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন। কয়েক বছর আগে তার মামা মহিশালবাড়ীর গোলাম রাব্বানীকে এক কেজি হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করে বিজিবি। এ ছাড়া তার শ্যালক সবুজ এক কেজি হেরোইনসহ গ্রেপ্তার হয়েছেন। সোহেল ছিলেন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বড় একজন ডোনার। দলীয় কর্মসূচীসহ অন্যান্য কর্মকান্ডে তিনি মোটা অংকের খরচ বহন করতেন।

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার বিরুদ্ধে হয় নাশকতার মামলা। এ মামলায় ৩৪ দিন হাজতবাস করেন তিনি। এর পর তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নাম লেখান। ৫ আগস্টের পর তিনি স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করে পরিষদে ছিলেন সক্রিয়। এখনো হাজিরা খাতায় করছেন স্বাক্ষর।

স্থানীয় শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘হেরোইন ব্যবসায়ী সোহেল রানার প্রচুর টাকা। তিনি টাকা দিয়ে দলীয় নেতাদের কিনে ফেলেন। গত ইউপি নির্বাচনে প্রায় দুই কোটি টাকা খরচ করেছেন বলে শুনেছি।’

গোদাগাড়ী থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে হেরোইনসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সোহেল। এ ঘটনায় নাটোর সদর থানার মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া ২০১৭ সালে পুলিশ বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে মামলা করেছিল। সে
মামলায় তিনি জেলে ছিলেন। ২০১৩ সালে তার নামে মারামারির একটি মামলা হয়েছিল। স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর আগে গাইবান্ধায় হেরোইনসহ একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সোহেল রানা। পরে সে মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন।
সোহেল রানা বলেন, তিনি জীবনে কখনোই মাদকসহ গ্রেপ্তার হননি। নাটোরে যে মামলা হয়েছিল, সে ঘটনায় তিনি আসামি ছিলেন না। পুলিশ ভুল করে তাকে আসামি করে। গাইবান্ধায় কখনোই গ্রেপ্তার হননি। তবে ২০১৭ সালে নাশকতা মামলায় জেলে থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি।

ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল রাজশাহীর নিউমার্কেটে বিগবাজার ও শ্রাবণ ফ্যাশান নামে দুটি দোকানের মালিক। এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর মালিকানাধীন বিলাসবহুল মাল্টিকমপ্লেক্স বিল্ডিংয়ে কিনেছেন ফ্ল্যাট ও দুইটি দোকানের পজিশন। রয়েছে চারটি ট্রাক ও দামি প্রাইভেটকার। গোদাগাড়ীতে জমি কিনেছেন অন্তত ২০ বিঘা। এছাড়া রাজশাহী নগরীতে একটি পুকুর ভরাট করে নির্মাণ করেছেন মার্কেট। এসব সম্পদের বিষয়ে সোহেল রানা বলেন, ‘আমার যত সম্পদ আছে, তার সব খবর আয়কর বিভাগ অবগত আছে। আমি নিয়মিত আয়কর দিই।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একাধিক নেতা-কর্মী জানিয়েছেন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করেই তিনি এলাকায় অবস্থান করছেন।
গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন জানান, সোহেল রানার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। ফলে তাকে গ্রেফতার করা হয়নি।

সর্বশেষ সংবাদ

 

রাজনীতি-এর আরও সংবাদ

 



প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: ইফতেখার আলম বিশাল

যোগাযোগ: শিরোইল গৌধুলী মার্কেট ঢাকা বাস টার্মিনাল বোয়ালিয়া রাজশাহী। ই-মেইল: smbishal18@gmail.com, মোবাইল:০১৭৭৫-৫৮৯৫৫৮