ইফতেখার আলম বিশাল: রাজশাহী নগরীতে ভুয়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে ”স, মিল মালিকদের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। প্রতারক নিজেকে “আবুল কালাম আজাদ” পরিচয় দিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার হুমকি দেন এবং বিকাশের মাধ্যমে অর্থ দাবি করেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, আজ বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে সপুরা ও ম্যাচ ফ্যক্টরি এলাকার একাধিক মিল মালিকের কাছে ফোন আসে ০১৮২৬-১৪২৮৭৯ নম্বর থেকে। অপরপ্রান্তের ব্যক্তি নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে বলেন, “জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে, তবে যদি সমস্যা না চান, ৪০ হাজার টাকা দিতে হবে।” দরদাম শেষে ৩০ হাজার টাকা দাবি করা হয়।
এক মিল মালিক বিষয়টি বুঝতে পেরে ফোন কেটে দেন। তবে অন্য দু’জন ইতোমধ্যে যথাক্রমে ১০ ও ৫ হাজার টাকা প্রদান করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
“ঘটনার সত্যতা প্রমাণে প্রতিবেদকের কাছে প্রতারকের ভয়ভীতিমূলক বক্তব্যসহ একটি অডিও রেকর্ড রয়েছে, যেখানে স্পষ্টভাবে টাকা দাবি করতে শোনা যায়।”
এদিকে বন কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, ঘটনার পূর্বে রাজশাহী উপজেলার বন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান ও তার সহকারী মাঞ্জুর ইসলাম তাদের মিল পরিদর্শনে এসে ফোন নম্বর সংগ্রহ করে নিয়ে যান। পরে ওই নম্বরেই প্রতারণার ফোন আসে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মিল মালিক জানান, বন কর্মকর্তা নম্বর নেওয়ার পরপরই প্রতারকের ফোন আসে, যা পুরো ঘটনাকে সন্দেহজনক করে তোলে।
এ বিষয়ে আব্দুল মান্নান জানান, “একজন ফোন দিয়ে নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দেয়। আমি সরল বিশ্বাসে নম্বরগুলো দিয়ে দিই। পরে বুঝতে পেরে মিলগুলোতে গিয়ে সবাইকে সতর্ক করি।”
তবে তার এমন আচরণ কতটা যৌক্তিক, সে প্রশ্নে তিনি সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি।
রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান শাহ বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে যদি ঘটে থাকে, তাহলে তা অনুচিত হয়েছে। বিস্তারিত জেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে ঘটনাটি বন বিভাগের অভ্যন্তরীণ তদারকি এবং তথ্য নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তুলছে।
ব্যাপারটি নিয়ে ম্যাচ ফ্যক্টরি মোড়ে আলোচনা এবং সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন,
ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দায়ীদের শনাক্ত করতে হবে, তথ্য ফাঁস বা সরবরাহে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের তথ্য নিরাপত্তা ও যাচাই-বাছাই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি। প্রতারকের মোবাইল নম্বর ট্র্যাক করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
মিল মালিক জিয়া উদ্দিন বলেন, সরকারি কর্মকর্তার সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে প্রতারক চক্র যেভাবে সাধারণ ব্যবসায়ীদের টার্গেট করছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ ঘটনা প্রমাণ করে, প্রশাসনিক তদারকির ঘাটতি থাকলে প্রতারকদের দৌরাত্ম্য রোধ করা কঠিন। সময় এসেছে তথ্য সুরক্ষা ও দায়িত্বশীলতার বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়ার।