রাজধানীর ইডেন কলেজ ক্যাম্পাসে শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রলীগের দুপক্ষ সড়কে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। আটকে রাখা হয় সাধারণ ছাত্রীদের। পাল্টাপাল্টি অভিযোগের তীর ছোড়ে দুপক্ষই। এতে ওঠে আসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নানা হয়রানির চিত্র।
কলেজ শাখার সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্য, সাধারণ ছাত্রীদের হেনস্তাসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন সংগঠনটির একাংশের নেতাকর্মীরা। এসব অভিযোগ তদন্তে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্যের কাছে লিখিত ১১ দফা দাবি জানান ওই নেতাকর্মীরা। এতে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির ১৬ জন সহ-সভাপতি, তিনজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও একজন সাংগঠনিক সম্পাদকসহ প্রায় ১০০ জন সাধারণ শিক্ষার্থী স্বাক্ষর করেন।
দাবিগুলো হলো:
১. সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসীর ওপর অতর্কিত হামলার বিচার করতে হবে।
২. বিভিন্ন সময়ে ছাত্রীদের অকথ্য গালিগালাজের সুষ্ঠু বিচার করতে হবে।
৩. সাধারণ শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক অশ্লীল প্রস্তাব দেয়ার ঘটনা তদন্ত করতে হবে।
৪. গণহারে শতাধিক কক্ষ দখলের সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে।
৫. অধ্যক্ষকে কটাক্ষ করে কথা বলার জবাব দিতে হবে।
৬. ছাত্রী হলের ক্যান্টিনে একচেটিয়া চাঁদাবাজি ও একচেটিয়া রাজনীতি বন্ধ করতে হবে এবং এ বিষয়ে প্রশাসনকেও নিরপেক্ষ হতে হবে।
৭. ক্যাম্পাসের কোনো সিসিটিভি ফুটেজ লুকানো যাবে না। সম্পূর্ণ ভিডিও ফুটেজ তদন্ত কমিটিকে দিতে হবে।
৮. আবাসিক হলে অবৈধভাবে যে ওয়াইফাই সংযোগ প্রবেশ করানো হয়েছে, তা অবশ্যই প্রশাসনের মাধ্যমে বের করে দিতে হবে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যে অর্থ নিয়েছেন, তা সম্পূর্ণ ফেরত দিতে হবে। সেটা ইডেন কলেজের ৪২ জন নেত্রী এবং প্রশাসনের উপস্থিতিতে দিতে হবে।
৯. ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসীর যে অশ্লীল ছবি তোলা হয়েছে, তা প্রশাসনের সামনে মুছতে হবে।
১০. বঙ্গমাতা হলের ১১ তলায় যেসব রুম দখলে আছে, তা উদ্ধার করতে হবে।
১১. সহ-সভাপতি মিম ইসলাম (সভাপতির অনুসারী বলে অভিযোগ রয়েছে) এবং সহ-সভাপতি রোকসানা মেয়েদের যে অত্যাচার করেছেন, তা তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
জানা যায়, সাধারণ ছাত্রীদের হেনস্তাসহ নানা হয়রানির বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য দেয়ায় সংগঠনের এক নেত্রীর ওপর চটেন সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা। জান্নাতুল ফেরদৌস নামে ওই নেত্রীকে হেনস্তা ও মারধরের অভিযোগে তামান্না ও রাজিয়াকে বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন অন্য পক্ষের নেতাকর্মীরা।
উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সময় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ফোন দেয়া হলে তারা ফোন রিসিভ করেননি। করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া ইডেন কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের প্রশাসন, শিক্ষক, হল প্রভোস্টসহ সংশ্লিষ্ট সবাই এ ঘটনা সম্পর্কে সবকিছুই জানেন। কিন্তু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে তারা জব্দ। কারণ, এর আগে রিভা আপার এ বিষয়ে একটা অডিও ফাঁস হয়েছে। সেখানে আমাদের অধ্যক্ষ ম্যাডামকে নিয়ে তিনি বলেছেন যে, ম্যাডামের নাকি কোনো ক্ষমতা নেই। সব ক্ষমতা নাকি ছাত্রলীগের সভাপতি রিভার কাছে আছে। কিন্তু তখন আমরা এটার কোনো প্রতিবাদ করিনি। কারণ, আমরা দল করি। আর দলের সুনাম ক্ষুণ্ন হোক, সেটা আমরা চাই না। কিন্তু ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দিন দিন এমন বৈরী আচরণ মেনে নেয়া যায় না। দিনের পর দিন এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আমাদের ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাবে।’