নিজস্ব প্রতিবেদক: জমি বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় রাজশাহীর গোদাগাড়ীর যমুনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এগ্রো পার্ক মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে ড্রাগন বাগানের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় গোদাগাড়ী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ভুক্তভোগী ড্রাগন চাষি ইসমাইল হোসেন (৪০)।
ইসমাইল হোসেন উপজেলার পিরিজপুর এলাকার বাসিন্দা। এর আগে দুপুরের দিকে প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের অনুলীপি উপজেলা কৃষি দপ্তরেও প াঠানো হয়েছে।
ড্রাগন চাষি ইসমাইল হোসেন জানান, গোদাগাড়ীর মাটিকাটা ইউনিয়নের সোনাদীঘি এলাকায় তার চার বিঘার ড্রাগন বাগান। দুই বছরের ড্রাগন বাগানে তিনি দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। ভালো লাভ পাওয়ায় আরও ১১ বিঘা জমি লিজ নিয়ে এবার ড্রাগন চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছেন। তাতেও সবমিলিয়ে অন্তত দেড় কোটি টাকা খরচা হবে।
এই চাষি বলেন, তার বাগানের পশ্চিম পাশে যমুনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এগ্রো পার্ক। তার ড্রাগন বাগানসহ ১৫ বিঘা জমির উপর নজর পড়েছে যমুনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এগ্রো পার্কের মালিকপক্ষের। আশেপাশে কিছু জমিও কিনেছে তারা। এখন যে কোনো মূল্যে তার বাগানের জমিটুকুনও কিনতে চান। এনিয়ে নিজেরা এবং দালালের মাধ্যমে প্রস্তাব দিচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি কিছুতেই জমি বিক্রিতে রাজি নন। এরপর থেকেই তার উপর নানান কৌশলে দমন-পীড়ন চলছিল।
শেষে গত ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরের দিকে কারখানার লোকজন নিয়ে জেনারেল ম্যানেজার আব্দুস সেলিম ও ম্যানেজার আবু সুফিয়ান বাদশা তাকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কাঁকনহাট জোনাল দপ্তরে তুলে নিয়ে যান। সেখানে সাদা কাগজে তার সই নেন। ওই দিন সন্ধ্যায় তার ড্রাগন বাগানের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি।
জানতে চাইলে যমুনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এগ্রো পার্কের জেনারেল ম্যানেজার আব্দুস সেলিম ড্রাগন বাগান মালিককে তুলে নিয়ে গিয়ে সাদা কাগজে সই নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, ড্রাগন বাগানের পাশে তারা যে জমি কিনেছেন তার উপর দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন গেছে।
যোগাযোগ করা হলে কর্মকর্তাদের এমন কাণ্ডের কিছুই জানেননা বলে দাবি করেন যমুনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এগ্রো পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লুৎফর রহমান। কিভাবে এমন কাণ্ড ঘটল তা তিনি খোঁজ নেবেন বলেও জানান।
তবে ওই কৃষকের আবেদনের প্রেক্ষিতে তার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কাঁকনহাট জোনের ডিজিএম তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, স্থানীয় একটি বিরোধ আছে। ওই বিরোধ মিটিয়ে তাকে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে হবে। তবে আবেদনের পরপরই বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী একরামুল হক।
এদিকে, ড্রাগন বাগানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগ তার দপ্তরেও এসেছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন সুলতানা। তিনি বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তারা দেখছেন। ওই বাগান মালিকের ফসল রক্ষায় তারা কার্যকর ব্যবস্থাও নেবেন। তবে এমন তথ্য তার কাছে এখনো নেই বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
অন্যদিকে সাধারণ ডায়েরির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ইসমাইল হোসেনের অভিযোগটি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে নেয়া হয়েছে। সেটি তদন্ত করে আইনত ব্যবস্থা নেয়া হবে।