নিজস্ব প্রতিবেদক: এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় দীপাবলি উৎসবের আয়োজন বরিশালে। প্রায় ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ দীপাবলি উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে বরিশাল মহাশ্মশানে।
ভূত চতুর্দশীর পুণ্য তিথিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নগরীর কাউনিয়ার মহাশ্মশানে এসে প্রয়াত স্বজনদের সমাধিতে দীপ জ্বেলে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এই দিনে পুরো মহাশ্মশান এলাকায় স্বজনদের মোমের আলোর রশ্মি ছড়িয়ে পড়ে। তিথি নক্ষত্র অনুযায়ী বুধবার বিকেল থেকে বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) মধ্য রাত পর্যন্ত এ উৎসব চলবে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মীয় এ আচারটি ২০০ বছর ধরে পালন করে আসছে।
মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সূত্র জানায়, প্রায় ছয় একর জমির ওপর অবস্থিত মহাশ্মশান এলাকায় কাঁচা-পাকা মিলিয়ে প্রায় ৬৫ হাজার সমাধি রয়েছে। দীপাবলি উৎসবে যোগ দিতে বরিশাল মহাশ্মশানে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে হিন্দুরা আসেন প্রয়াত স্বজনদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। তাদের আত্মার শান্তি কামনার জন্য শ্রদ্ধার প্রদীপ জ্বালিয়ে দেন সমাধিতে। সমাধিতে রাখা হয় প্রিয় মানুষের প্রিয় খাবার ও পোশাক।
মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘বরিশাল নগরীর কাউনিয়া বিসিক রোড ও লাকুটিয়া খালের মধ্যস্থান ঘিরে প্রায় ছয় একর জায়গা নিয়ে ২০০ বছরের প্রাচীন দেশের অন্যতম বৃহৎ মহাশ্মশান। শুধু দেশেরই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ও প্রাচীনতম মহাশ্মশান এটি। উপমহাদেশে এত বড় সমাধিস্থল আর নেই। উৎসব হিসেবেও এটি উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ দীপাবলি অনুষ্ঠান। আমরা যত দূর জানি, এ রকম বৃহত্তর পরিসরে উপমহাদেশের অন্য কোথাও দীপাবলি উৎসব অনুষ্ঠিত হয় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ এই মহাশ্মশানে কবি জীবনানন্দ দাশের বাবা সত্যানন্দ দাশগুপ্ত, পিতামহ সর্বানন্দ দাশগুপ্ত, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা বিপ্লবী দেবেন ঘোষ, মনোরমা বসু মাসিমা, দানবীর অমৃতলাল দে, শিক্ষাবিদ কালিচন্দ্র ঘোষ, ২০০৫ সালে ঝালকাঠীতে জেএমবির বোমা হামলায় নিহত বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ের সমাধি মন্দিরসহ বহু খ্যাতিমানদের সমাধি রয়েছে।’ বরিশাল সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কাজল ঘোষ বলেন, ‘কত বছর আগে এই শ্মশানে দীপাবলি উৎসব শুরু হয়েছে, সেটা আমার জানা নেই। তবে ছোটবেলা থেকে বাবা, ঠাকুরদার কাছ থেকে যতটুকু জেনেছি, প্রায় ২০০ বছর আগে এ উৎসব শুরু হয়। দিনে দিনে এর ব্যাপ্তি বেড়েছে। অনুষ্ঠানটি ভারতে দীপাবলি উৎসব নামে পরিচিত হলেও বরিশালে দীপালি উৎসব হিসেবে বেশি পরিচিত। অনুষ্ঠানে দলমত নির্বিশেষে সব ধর্মের মানুষ উপভোগ করতে আসেন।’
বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মানবেন্দ্র বটব্যাল বলেন, ‘দীপাবলি উৎসবের সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও মেলা বসবে। দীপাবলির দিন বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ নানা ধর্মের মানুষের ঢল নামে মহাশ্মশানে। ভারত, নেপালসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ এখানে আসেন প্রয়াত স্বজনদের স্মরণে। যাদের স্বজন নেই এ রকম প্রায় এক হাজার সমাধি কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে আলোকিত করা হবে।’ বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে দীপাবলি উদযাপনের লক্ষ্যে মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মহাশ্মশান এলাকায় পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে।