• রাজশাহী, বাংলাদেশ
  • ৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • নিবন্ধন এর জন্য আবেদনকৃত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  • news@sonybangla.news
  • ০১৭৭৫-৫৮৯৫৫৮

ডিলাদের সহায়তায় সীমান্তের ফেনসিডিল যাচ্ছে ঢাকা-গাজীপুরে

প্রকাশ: রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২২ ১২:০২

ডিলাদের সহায়তায় সীমান্তের ফেনসিডিল যাচ্ছে ঢাকা-গাজীপুরে

ডিলাদের সহায়তায় সীমান্তের ফেনসিডিল যাচ্ছে ঢাকা-গাজীপুরে

অনলাইন ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকা থেকে তিন মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। এসময় তাদের কাছ থেকে ১৪৬৫ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়। জব্দ হওয়া ফেনসিডিলগুলো কাভার্ডভ্যানে বস্তার মধ্যে করে পাচারের চেষ্টা করছিল একটি চক্রট।

গ্রেপ্তারদের নাম- চক্রের মূলহোতা মো. আলী আকবর (৩৫), রিপন মিয়া (২৭) এবং নুর হোসেন (৩৫)। শনিবার (১৫ অক্টোবর) দিবাগত রাতে তাদের গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৩ এর একটি দল। এসময় মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত কাভার্ডভ্যান এবং জিপ জব্দ করা হয়।

জানা গেছে, ফেনী-কুমিল্লাসহ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থান করেন ফেনসিডিলের ডিলাররা। তাদের কলে সীমান্তে যায় আকবরের গাড়ি। গাড়িগুলোতে থাকে বিশেষ চেম্বার। দেড় দুই কিলোমিটার সামনের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি রেকি করত চক্রের অন্য সদস্যরা। আর এভাবেই ৪/৫ জেলা পাড়ি দিয়ে আকবরের ফেনসিডিলের হাত দিয়ে চালান পৌঁছে যেত নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও গাজীপুরে।

রোববার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল রাতে অভিযান চালিয়ে কাভার্ডভ্যান এবং জিপের ভেতরে বস্তার মধ্যে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে রাখা ১৪৬৫ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়। এসময় মাদক পাচার চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার ও দুটি গাড়ি জব্দ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানিয়েছে, জিপের মালিক আলী আকবর চক্রের মূলহোতা। কুমিল্লা থেকে নারায়ণগঞ্জে ফেনসিডিলের চালানটি পৌঁছে দেওয়ার জন্য আলী আকবরের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের জনৈক এক ব্যক্তির চুক্তি হয়।

চুক্তি মোতাবেক ১৫ অক্টোবর রাত ১০টায় রাজধানীর তেজগাঁও থেকে কুমিল্লার উদ্দেশে ব্যক্তিগত জিপ নিয়ে রওয়ানা করে আকবর। কুমিল্লার সোয়াগাজী এলাকায় পৌঁছানোর পর তিনি একটি হোটেলের সামনে অপেক্ষা করতে থাকেন। এরই মধ্যে চক্রের পূর্ব পরিচিত কাভার্ডভ্যানের ড্রাইভার নুর হোসেনকে ফোন করে কুমিল্লার সোয়াগাজী বাজারে অবস্থান করতে নির্দেশ দেন।

কাভার্ডভ্যানটি সোয়াগাজী বাজারে এসে পৌঁছালে কুমিল্লা এলাকার ডিলার বস্তার ভেতরে ফেনসিডিল ভর্তি করে কাভার্ডভ্যানে লোড করে তালাবন্ধ করে দেন। তারপর আলী আকবর জিপের ব্যাক ডালার ভেতরে বিশেষ কায়দায় তৈরি করা চেম্বারে ফেনসিডিল লোড করেন। সেগুলো তারা নারায়ণগঞ্জের জনৈক এক ব্যক্তির কাছে সরবরাহের উদ্দেশে যাত্রা করেন।

আগে আকবর লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জের বিভিন্ন খাবার হোটেলে কাজ করতেন। পরে ঢাকায় এসে পাঁচ বছর ট্রাকের হেলপার হিসেবে কাজ করেন। সেখানে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। প্রথমে তিনি মাদক পরিবহনের কাজ করতেন। যার মাধ্যমে স্বল্প সময়ে তিনি গাড়ি-বাড়ি, বিপুল সম্পত্তি ও নগদ অর্থের মালিক বনে যান।

চোরাচালানে আকবর ধরা পড়েনি কখনো

অধিক টাকা উপার্জনের উদ্দেশে আলী আকবর নিজের জিপসহ বিভিন্ন গাড়ি ভাড়া নিয়ে মাদক পরিবহনের কাজ শুরু করেন। আলী আকবর যাত্রী বেশে এবং রিপন তার ড্রাইভার হিসেবে মাদকের চালানের বড় অংশ নিয়ে কাভার্ডভ্যানের পেছনে অবস্থান নেন। যেন কাভার্ডভ্যানটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করলে তারা কৌশলে চালানের বড় অংশ নিয়ে পালিয়ে যেতে পারেন। তার সহযোগী মাদক পরিবহনকারী যানটি যাতে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছতে পারে এবং মাদকের চালান ধরা পড়লেও তার নাম যেন প্রকাশ না পায় এজন্য মাদক পরিবহনকারী চালকদের নির্দেশ দেওয়া থাকে। যার কারণে ইতোপূর্বে কখনো আটক হননি কৌশলী আকবর। সহযোগীদের কেউ ধরা পড়লে তাদের আইনগত সহায়তায় সহযোগীতা করতেন আকবর।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তার আলী আকবর নিজের জিপ থাকা সত্ত্বেও অধিক নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন কাভার্ডভ্যান, ট্রাক, পিকআপ ভাড়া করে মাদক পরিবহন করতেন। ঘটনার দুইদিন আগে ফেনসিডিল পরিবহনের উদ্দেশে আলী আকবর ও তার ড্রাইভার রিপন মিয়া কুমিল্লা যান। নুর হোসেন চালিত কাভার্ডভ্যানটি ২৫ হাজার টাকায় ভাড়া করে কুমিল্লার ডিলারের সঙ্গে দর দাম করে আসেন।

সীমান্তে ডিলার কারা? কোন কোন এলাকায় পাচার করা হয় ফেন্সিডিল? জানতে চাইলে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, চক্রটি ফেনসিডিলের চালান কুমিল্লার সীমান্ত এলাকা থেকে সংগ্রহ করে রাজধানীসহ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী ও সাভারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিতেন। মূলত আলী আকবরের নেতৃত্বে চক্রটি পরিবহন ব্যবসার আড়ালে ফেনসিডিল পাচার কার্যক্রম পরিচালনা করত।

চক্রটি পণ্যবাহী পরিবহনের চালক ও সহকারীদের মোটা অংকের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের গাড়িতে ফেনসিডিল পরিবহনের জন্য প্রলুব্ধ করত। কুমিল্লার সোয়াগাজীর সিন্ডিকেট থেকে ফেনসিডিল সংগ্রহের পর কখনও আলী আকবর নিজে আবার কখনও তার নির্দেশনায় গ্রেপ্তার নুর হোসেন দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান পৌঁছে দিত। গত ৩ বছরে চক্রটি ৫০টির বেশি চালান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিয়ে কোটি টাকা কামিয়েছে।

গ্রেপ্তার রিপন মিয়া ২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত উবারে প্রাইভেট কার চালাতেন। এরপর তিনি একটি প্রাইভেট কোম্পানির কাভার্ডভ্যান চালান। তখন তিনি আলী আকবরের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। তার কোম্পানির কাভার্ডভ্যান দিয়ে একাধিক মাদকের চালান রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেন। মাদক পরিবহনের কৌশল হিসেবে রিপন মিয়াকে জীপের ড্রাইভার হিসেবে ব্যবহার করতেন আলী আকবর।

এদিকে গ্রেপ্তার নুর হোসেন রামগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসে দুই বছর বিভিন্ন খাবার হোটেলে কাজ করেন। পরে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ট্রাকের হেলপারি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। একপর্যায়ে নিজে গাড়ি চালানো শিখে কিছুদিন পিকআপের ড্রাইভার হিসেবে এবং পরবর্তীতে কাভার্ডভ্যানের চালক হিসেবে কাজ করেন। তখন আলী আকবরের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।

সনি বাংলা ডট কম/ইআবি

সর্বশেষ সংবাদ

 

রাজনীতি-এর আরও সংবাদ

 



প্রকাশক ও সম্পাদক: মো: ইফতেখার আলম বিশাল

যোগাযোগ: শিরোইল গৌধুলী মার্কেট ঢাকা বাস টার্মিনাল বোয়ালিয়া রাজশাহী। ই-মেইল: smbishal18@gmail.com, মোবাইল:০১৭৭৫-৫৮৯৫৫৮