দীর্ঘ দুই দশকের অবসান শেষ করে অবশেষে খুলে দেওয়া হচ্ছে ভারত-শাসিত কাশ্মীরের সিনেমা হলগুলো। এর ফলে আবান সিনেমা দেখান সুযোগ পাচ্ছে কাশ্মীরবাসী।
বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কাশ্মীরের প্রধান শহর শ্রীনগরের ইনক্স মাল্টিপ্লেক্সকে নতুন করে প্রস্তুত করা হয়েছে। পিতার সঙ্গে মিলে এটি চালু করেছেন ভিকাশ ধর নামে এক ব্যক্তি। ধর বলেন, এ পর্যায়ে আসতে তাদের চার বছর সময় লেগেছে। তবে এটা কোনো সাধারণ কাজ ছিল না। তাদের পরিবার আট কক্ষের একটি গেস্ট হাউস ভেঙে সিনেমা হলটি তৈরি করেন।
সিনেমা কমপ্লেক্সটি উদ্বোধন হয়েছে গত ২০ সেপ্টেম্বর। সেদিন বলিউড তারকা আমির খানের লাল সিং চাড্ডা প্রদর্শনের মাধ্যমে হলটির পর্দা উন্মোচিত হয়। জম্মু ও কাশ্মীরের লে. গভর্নর মনোজ সিনহা এটিকে ঐতিহাসিক দিন আখ্যায়িত করেছেন। বলেছেন, এটি সেখানকার মানুষের আশা, আকাঙ্ক্ষা, আত্মবিশ্বাস ও স্বপ্নের নতুন সূচনা।
এ সিনেমা কমপ্লেক্সটিতে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেমসহ তিনটি সিনেমা হল আছে। শনিবার (০১ অক্টোবর) থেকে দুটি হলে সিনেমা প্রদর্শন শুরু হবে। তৃতীয়টিতে কাজ বাকি থাকায় এটিতে সিনেমা শুরু হতে সময় লাগবে। পাশাপাশি কমপ্লেক্সে শিশুদের জন্য আলাদা জোন আছে। ধরের পরিবার জানায়, তারা সংঘাত পীড়িত ওই অঞ্চলের শিশুদের ফ্যান্টাসির জগতে যাওয়ার সুযোগ দিতে চান।
একসময় প্রচুর সিনেমা হল ছিল জম্মু ও কাশ্মীরে। শ্রীনগরেই ছিল প্রায় দশটি। এছাড়া বলিউডের অনেক সিনেমার চিত্রধারণ করা হয়েছে কাশ্মীরে। কিন্তু আশির দশকে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই শুরু হলে পরবর্তীতে এর জের ধরে বন্ধ হয়ে যায় সিনেমা হলগুলো। সহিংসতা জোরদার হলে জঙ্গি গোষ্ঠী আল্লাহ টাইগার্স চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও মদের দোকানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
অব্যবহৃত থাকায় একসময় এসব সিনেমা হল ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পে পরিণত হয়। এছাড়া অনেকগুলো পরিবর্তন করে দোকানপাট ও হাসপাতাল তৈরি করা হয়।
১৯৯৯ সালে ভারত সরকার আবার সিনেমা হলগুলো আবার চালুর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এরপরই রিগ্যাল সিনেমা হলে রক্তক্ষয়ী হামলা হয়। তাতে করে ওই উদ্যোগ ভেস্তে যায়।
২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে লাদাখকে আলাদা করে প্রশাসনিক অঞ্চল চালু করেছে। এরপর অনেক আইন ও নীতি তৈরি ও বাস্তবায়নের কাজ চলছে। যদিও স্থানীয়রা এর বিরোধিতা করে অভিযোগ করছেন, সরকার ওই অঞ্চলের জনমিতিও পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
লে. গভর্নর সিনহার প্রশাসনও চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ইনক্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমরা এখানে একটি ফিল্ম সিটি তৈরির প্রক্রিয়ায় আছি। একইসঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরের অন্তত বিশ জেলায় ১০০ আসনের সিনেমা হল তৈরি হবে।
নতুন করে সিনেমা হল চালুর উদ্যোগ নেওয়ার পর স্থানীয় শিল্পীরা এতে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। আবার অনেকের মধ্যে এটি পুরনো স্মৃতি জাগিয়ে তুলেছে।
অনেকেই এই উদ্যোগকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে না। তারা এটিকে রাজনৈতিক প্রকল্প হিসেবে অভিহিত করছেন। এ বিষয়ে একজন শিক্ষার্থী বিবিসিকে বলেছেন, সরকার আসলে দেখাতে চাইছে যে সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেছে।