মহামারি থেকে শুরু করে জলবায়ু সংকট, গত পাঁচ বছরে এ ধরনের নানা বিপর্যয় দৈনন্দিন জীবনকে বিপর্যস্ত করেছে। আর এসব বিপর্যয় থেকে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ মানুষকে ঠেলে দিয়েছে আধুনিক দাসত্বের দিকে।
সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), মানবাধিকার সংস্থা ওয়াক ফ্রি এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এ সংক্রান্ত এক যৌথ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৫ কোটি মানুষ বাধ্যতামূলক শ্রম কিংবা জোরপূর্বক বিয়ের শিকার বলে মনে করা হয়। ২০১৬ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত যা ২৫ শতাংশ বেড়েছে।
সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, আধুনিক দাসত্ব বলতে মূলত জোরপূর্বক শ্রম বা বিয়ে বোঝায়, যখন কেউ হুমকি, সহিংসতা এবং প্রতারণার কারণে তা মেনে চলতে বাধ্য হয়। আধুনিক দাসত্ব নিয়ে গবেষণার জন্য বিশ্বের ১৮০টির বেশি দেশে ধারাবাহিকভাবে সমীক্ষা পরিচালনা করেছেন গবেষকরা।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারি, সশস্ত্র সংঘাত এবং জলবায়ু সংকট কর্মসংস্থান ও শিক্ষায় ‘অভূতপূর্ব ব্যাঘাত’ সৃষ্টি করেছে। যার ফলে দারিদ্র্য, অনিরাপদ অভিবাসন এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সবই আধুনিক দাসত্বের ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
আইএলও-এর মহাপরিচালক গাই রাইডারের মতে, ‘মানবাধিকারের অবিরাম এই মৌলিক অপব্যবহারকে কোনো কিছুর মাধ্যমেই ন্যায্যতা দেয়া যায় না। আমরা জানি কী করা দরকার এবং আমরা জানি এটা করা যেতে পারে। কার্যকর জাতীয় নীতি এবং প্রবিধান প্রয়োজন। কিন্তু সরকারের একার পক্ষে তা করা সম্ভব নয়।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নত আইন, শক্তিশালী আইনি সুরক্ষা এবং নারী, মেয়ে ও দুর্বল মানুষের জন্য বৃহত্তর সমর্থন উল্লেখযোগ্যভাবে আধুনিক দাসত্বের অবসান ঘটাতে পারে।
আইএলও, ওয়াক ফ্রি এবং আইওএমের যৌথ এ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের শেষদিকে বিশ্বজুড়ে ২ কোটি ৮০ লাখ মানুষ বাধ্যতামূলক শ্রমে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়া ওই সময়ে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছেন। অর্থাৎ বিশ্বের প্রতি ১৫০ জনের মধ্যে প্রায় একজন আধুনিক দাসত্বের বেড়াজালে আটকা পড়েছেন।