নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহীঃ নির্বাচনী আইন ভেঙ্গে পিকনিকের নামে সকল উপজেলা ও পৌরসভার চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, মেম্বার এবং সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর ও মেম্বারদের ডেকে নিজের পচ্ছন্দের প্রার্থীর ভোট দেওয়ার জন্য বলেছেন
রাজশাহীর পবা-মোহনপুর আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গের কারণে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল একটি সতর্ক বার্তা স্বরূপ একটি চিঠিও প্রদান করেছেন বলে জানা গেছে। শনিবার (০১ অক্টোবর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল।
তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। তিনি একজন সম্মানিত সংসদ সদস্য। একটি দায়িত্বপূর্ণ পদে থাকার পরও তিনি এমন আচরণ করতে পারেন না। তার এমন আচরণ বিধি ভঙ্গ করার কারণে আজ তাঁকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যেনো এমন বিধিবহির্ভূত কর্মকান্ড থেকে দূরে থাকেন সেজন্যও বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজশাহীর পবায় চৈতির বাগান নামেক একটি বিনোদন স্পষ্টে এ আয়োজন করেন এমপি আয়েন উদ্দিন। সেখানে রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মহানগর আ.লীগের সহসভাপতি মীর ইকবাল সহ রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার এবং অঙ্গসংগঠনের অন্যান্য নেতা ও জেলা পরিষদের ভোটারা উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ১৭ অক্টোবর রাজশাহী জেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী আক্তারুজ্জামান আক্তারকে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন এমপি আয়েন। আয়েনের সাথে সুর মিলিয়ে পবার মাটিতে আক্তারকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বজলে রেজভি আল হাসান মঞ্জিল। তাদের সাথে একই আওয়াজ তোলেন পবার হরিয়ান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম বাচ্চু। তিনি বলেন, কারো বাবার ক্ষমতা থাকলে আমার এলাকায় ভোট চাইতে আসুক। আমার এলাকায় মীর ইকবাল ভাই ছাড়া অন্য কেউ নিতে পারবে না।
নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে তিনি তার এলাকায় একটি পিকনিকের আয়োজন করেন। সেখানে পবা ও মোহনপুর উপজেলার চেয়ারম্যান, পৌর সভার সকল চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর ও মেম্বার সহ সকল জেলা পরিষদের ভোটারদের দাওয়াত দেন তিনি। ওই পিকনিক স্পটেই একটি মঞ্চ ও মাইকের ব্যবস্থা করে সকল ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষ হয়ে সকলকে ভোট দেবার আহব্বান জানান। রাজশাহী জেলা পরিষদের মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে দাঁড়ানো
চেয়ারম্যান প্রার্থী আক্তারুজ্জামান আক্তার অভিযোগ, প্রতীক বরাদ্দের পরও রাজশাহী পবা উপজেলার অধিকাংশ ভোটারকে জোর করে পিকনিকের নামে চৈতির বাগানে উপস্থিত হতে বাধ্য করেছে এমপি আয়েন উদ্দিন। সেখানে আ.লীগ আ.লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল সহ আ.লীগের বেশকিছু নেতারা ছিলেন।
এসব ঘটনায় নির্বাচনের আচারনবিধি ভঙ্গের একটি অংশ। এমপি আয়েন উদ্দিন জেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা-২০১৬ এরব বিধি ২ (১৪) অনুসারে সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলতে প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, সরকারের মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমপদমর্যদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই বিধিমালার বিধি ২২ (১) অনুসারে সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্বাচনপূর্ব সময়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না।
এ অবস্থায় রাজশাহী জেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬ এর বিধি ২২ (১) ভঙ্গ করে কাপ-পিরিচ প্রতীকের হয়ে প্রচার-প্রচারণা করেছেন পবা-মোহনপুর আসনের সাংসদ আয়েন। আমি এবিষয়ে আবারো নির্বাচন কমিশন, জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল মহোদয়কে অভিযোগ জানিয়েছি।
অভিযোগের পবা-মোহনপুর আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন প্রথমে অস্বীকার করেন। তবে পরে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, সেখানে (চৈতীর বাগান) আমার সব দলীয় লোকজন আসছিলেন। আমাকেও সেখানে দাওয়াত করেছিলেন, ‘তাই আমি গিয়েছিলাম। দলীয় লোক তাই আমার মৌন সমর্থন ছিল আর কি, কিন্তু কাউকে জোর করে ভোট দিতে বলি নাই।’তবে প্রতিবেদকের কাছে তার একটি ভিডিও রয়েছে এবং তাতে তাঁকে সরাসরি নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে কাপ-পিরিচ প্রতীক বরাদ্দ পাওয়া আ.লীগ সমর্থিত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবালের হয়ে ভোট চাইতে দেখা যাচ্ছে জানালে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার ভুল হয়ে গেছে রে ভাই। দলীয় লোকজন সবাই ছিল। না বললে খারাপ দেখায়। একারণে ভুল করে বলে ফেলেছি।
সনি বাংলা ডট কম/ইআবি