রাজশাহীর রাজপাড়া থানা–পুলিশের বরাত দিয়ে জামিউলের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, রামেক হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় বেলা সোয়া দুইটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তের জন্য তাঁর মরদেহ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মর্গে নেওয়া হয়। ময়নাতদন্ত শেষ হলে স্বজনদের কাছে তাঁর লাশ হস্তান্তর করা হবে। আজ রাতের মধ্যেই লাশ তাঁর বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। সেখানে জানাজা শেষে দাফন করা হবে।
ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনার পর থেকে প্রধান অভিযুক্ত নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ গা ঢাকা দিয়েছেন। তবে চেয়ারম্যানের এক ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার রাতে উপজেলার আমতলী বাজার মসজিদের মাইক চুরির ঘটনা নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে সালিস অনুষ্ঠিত হয়। সালিসে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক জামিউল আলীমকে জড়িত হিসেবে সন্দেহভাজনদের তালিকা করা হয়। ওই রাতেই জামিউল আলীম ফেসবুক লাইভে এসে সালিস ষড়যন্ত্রমূলক ও আক্রোশবশত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের সমালোচনাও করেন।
মামলার এজাহার ও নলডাঙ্গা থানা সূত্রে জানা যায়, এর জেরে গত সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে আমতলী বাজারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ ও তাঁর সমর্থকেরা জামিউলকে এলোপাতাড়ি পেটান। এ সময় তাঁর বাবা ফরহাদ হোসেন (৬০) তাঁকে উদ্ধার করতে এগিয়ে গেলে তাঁকেও মারপিট করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁদের প্রথমে নাটোর সদর হাসপাতালে, পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে জামিউলকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
এ ঘটনায় সোমবার রাতেই ফরহাদ হোসেনের স্ত্রী জাহানারা বেগম বাদী হয়ে নলডাঙ্গা থানায় মামলা করেন। মামলায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ, তাঁর দুই ভাই ফয়সাল সাহ (৫৩) ও আলিম আল রাজি সাহকে আসামি করা হয়। পুলিশ আলিম আল রাজিকে গ্রেপ্তার করেছে।
ঘটনার পর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ফেসবুক লাইভে কুৎসা রটানোর কারণে তাঁর মানহানি হয়েছে। ঘটনার সময় তিনি এর কারণ জানতে চাইলে জামিউল ও তাঁর বাবা মিলে তিনিসহ তাঁর সমর্থকদের ওপর হামলা করে মারপিট করেছেন। এ সময় ধস্তাধস্তিতে তাঁরাও কিছুটা আহত হতে পারেন।
গত কয়েক দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জামিউলের স্বজন ও তাঁর সমর্থক রাজনৈতিক নেতারা মৃত্যুর গুজব ছড়াতে থাকেন। গত মঙ্গলবার রাতে বিক্ষোভ মিছিলও হয়। অবশেষে আজ দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।
জামিউলের চাচা এস এম ফিরোজ দুপুরে জানান, তিনি জামিউলের মৃতদেহ নেওয়ার জন্য মর্গের সামনে অপেক্ষা করছেন।